রক্তশূন্যতার কারন ও প্রতিকার
আয়রন বা লৌহ আমাদের শরীরের একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। এটা মূলত লোহিত রক্তকনিকার মধ্যে থাকে এবং অক্সিজেন পরিবহন করার মাধ্যমে দেহের সকল কোষকে সতেজ রাখায় ভূমিকা পালন করে। আয়রনের অভাবে দেহে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। রক্তশূন্যতা আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জনে ৫৫.৩ জন রক্তশূন্যতায় ভোগেন। এর মধ্যে ৩৬.৭ জন পুরুষ এবং ৬৬.৩ জন নারী। নারীদের মধ্যে ৪৩.৪ জন আবার প্রজননক্ষম নারী।
রক্তশূন্যতার উপসর্গগুলো হচ্ছে-
১) শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া বা চেহারায় ফ্যাকাসে ভাব
২) দুর্বলতা অনুভব করা
৩) বুক ধড়-ফড় করা
৪) সামান্য পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠা
৫) ব্যায়ামের পরে শ্বাসকষ্ট অনুভব হওয়া
৬) কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ শোনা
৭) খাবারে অরুচি ও ক্ষুধামন্দা
৮) ভঙ্গুর নখ বা নখের আকৃতি চামচের মত হওয়া
৯) কাজকর্ম বা পড়ালেখায় মনোযোগের অভাব
রক্তশূন্যতার কারনসমূহ :
রক্তশূন্যতার কারনগুলোকে মূলত তিনভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমত, খাদ্য তালিকায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকা।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন কারনে শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। রক্তক্ষরণের প্রধান কারনগুলো হচ্ছে-
ক) মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত। আমাদের দেশে নারীদের রক্তস্বল্পতার জন্য এটাই প্রধানত দায়ী।
খ) শরীরে কৃমির সংক্রমন।
গ) পরিপাকতন্ত্রে আলসার বা এ জাতীয় সমস্যা।
ঘ) অপারেশন বা জখম পরবর্তী রক্তপাত।
ঙ)অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারে পাকস্থলী থেকে রক্তক্ষরণ।
চ) পাইলস বা হেমোরয়েডস রোগ।
তৃতীয়ত, শরীরে আয়রন বা লৌহের চাহিদা স্বাভাবিকের চাইতে বৃদ্ধি পাওয়া। সাধারণত গর্ভকালীন সময়ে, নবজাতককে স্তন্যদানের সময়ে কিংবা শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির সময় শরীরে আয়রনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
রক্তশূন্যতা থেকে বেঁচে থাকার উপায়-
১. আয়রনসমৃদ্ধ খাবার, ফলমূল ও শাকসবজি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। লালশাক, পালংশাক, মূলা, মিষ্টি কুমড়া, কুমড়ার বীজ, কচু, কাঁচা কলা, পাকা কলা, দুধ, মলা-ঢেলাসহ সকল ছোট মাছ এবং সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এগুলো খাবার অভ্যাস করতে হবে।
২. মহিলাদের মাসিকের সময়ে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারন নির্ণয় করা ও তার জন্য যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা।
৩. সব বয়সেই কৃমিনাশক ওষুধ নিয়মিত খাওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
৪. গর্ভাবস্থায়, বাড়ন্ত বয়সে এবং অপরিণত শিশুর ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার প্রদানের দিকে নজর দেয়া।
৫. ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার পরিহার করা।
৬. এসবের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.