বর্তমানে বিশ্বে কম্পিউটারের শেষ নেই। নিত্য নতুন কম্পিউটার আবিস্কৃত হচ্ছে। তারপরেও কম্পিউটারকে গঠনগত দিক ও আকার আকৃতির দিক থেকে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে। নিম্নে শ্রেণিবিভাগ গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো-
গঠনগত দিক থেকে কম্পিউটারকে ৩(তিন)ভাগে ভাগ করা হয়–
- এনালগ কম্পিউটার(Analog Computer)
- ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)
- হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer)
আকার,আকৃতির দিক থেকে ডিজিটাল কম্পিউটারকে ৪(চার)ভাগে ভাগ করা হয়–
- সুপার কম্পিউটার (Super Computer)
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)
- মিনি কম্পিউটার (Mini Computer)
- মাইক্রো কম্পিউটার (Micro computer)
ব্লক চিত্রের সাহায্যে কম্পিউটারের শ্রেণি বিভাগ দেয়া হলো–
ক)এনালগ কম্পিউটার (Analog Computer)
গ্রীক শব্দ Analogy থেকে Analog শব্দ এসেছে। এনালগ শব্দটির অর্থ হচ্ছে সাদৃশ্য। যে কম্পিউটার তাপ, চাপ বায়ু ও তরল পদার্থের প্রবাহ ইত্যাদির উঠা-নাম বা হ্রাস- বৃদ্ধির পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত হয় তাকে এনালগ কম্পিউটার বলে। এনালগ কম্পিউটারে সরবরাহকৃত উপাত্তগুলোকে বৈদ্যুতিক ভোল্টে রুপান্তর করে। প্রক্রিয়াকরনের ফলাফল ঘড়ির কাটার ন্যায় প্রদর্শিত হয় এবং ফলাফলের সুক্ষ্মতা তুলনামুলক ভাবে কম। এনালগ কম্পিউটার গাড়ি,উড়োজাহাজ,মহাকাশযান পেট্রোল পাম্প ইত্যাদির গতিবেগ নির্ণয় করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
খ)ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer)
ডিজিট থেকে ডিজিটাল শব্দ এসেছে। যে কম্পিউটার বাইনারি ডিজিট ০ I ১ এর উপর ভিত্তি করে উপাত্ত সংগ্রহ,প্রক্রিয়াকরণ ও ফলাফল প্রর্দশন করে তাকে ডিজিটাল কম্পিউটার বলে । ডিজিটাল কম্পিউটার কাজ করে গাণিতিক নিয়মে,ফলাফল প্রর্দশিত হয় মনিটরের মাধ্যমে, প্রর্দশিত ফলাফল প্রিন্টারের মাহায্যে মুদ্রণ করা হয়। এ কম্পিউটার অত্যন্ত সুক্ষ্ম ও নির্ভল ভাবে ফলাফল প্রদান করে । ডিজিটাল কম্পিউটার বহুমুখি কাজে ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীতে যত কম্পিউটার আছে তন্মদ্ধে শতকরা ৯৯% ডিজিটাল কম্পিউটার।
গ) হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer)
যে কম্পিউটার এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের সমন্বয়ে গঠিত তাকে হাইব্রিড কম্পিউটার বলে। হাইব্রিড কম্পিউটারকে সঙ্কর জাতিয় কম্পিউটারও বলা হয়। রোগীর রক্তের চপ, শরীরের তাপমাএা, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ইত্যাদি ডেটা এনালগ অংশের মাধ্যমে ইনপুট হিসাবে রোগীর অবস্থা ফলাফল আকারে উপস্থাপন করে। পরীক্ষাগারে ঔষধের মান নির্ণয়, রাসায়নিক দ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণ, নভোযান, ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ ইত্যাদি কাজে হাইব্রিড কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এ কম্পিউটারের দাম অত্যন্ত বেশি, ব্যবহার সীমিত।
আকার,আকৃতির দিক থেকে ডিজিটাল কম্পিউটারকে ৪(চার)ভাগে ভাগ করা হয়–
- সুপার কম্পিউটার (Super Computer)
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)
- মিনি কম্পিউটার (Mini Computer)
- মাইক্রো কম্পিউটার (Micro computer)
১)সুপার কম্পিউটার (Super Computer)
আকার আকৃতির দিক থেকে সবচেয়ে কম্পিউটার হচ্ছে সুপার কম্পিউটার । এ কম্পিউটার সর্বাধিক শক্তিশালী,দ্রুতগতি সম্পন্ন ও ব্যয়বহুল। অর্থাৎ যে কম্পিউটার আকার আকৃতির দিক থেকে সর্ববৃহৎ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে তথ্য প্রক্রিয়াকরন করতে পারে এবং বিশাল পরিমান তথ্য সংরক্ষন করে রাখতে পারে তাকে সুপার কম্পিউটার বলে। ৫ শতাধিক ব্যক্তি একই সাথে এ কম্পিউটারে কাজ করতে পারে।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা,নভোযান,ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ,জঙ্গি ও ড্রোন বিমান নিয়ন্ত্রন, বিপুল পরিমান তথ্য বিশ্লেষণ ও সংরক্ষন ইত্যাদি প্যারাগন,জাপানের নিপ্পন ইলেক্ট্রনিক্্েরর সাইবার ২০৫, কেরি-১ ইত্যাদি সুপার কম্পিউটারের উদাহরন।
২)মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)
সুপার কম্পিউটার চেয়ে ছোট এবং মিনি কম্পিউটারের চেয়ে বড় এমন কম্পিউটারকে মেইনফ্রেম কম্পিউটার বলে। যে কম্পিউটারে অনেক গুলো ছোট ছোট কম্পিউটার যুক্ত করে শতাধিক লোক একই সঙ্গে ব্যবহার করতে পারে তাকে মেইফ্রেম কম্পিউটার বলে।এ কম্পিউটারে জটিল সুক্ষ্ম উপাত্ত প্রক্রিয়াকরন করা যায়, বিশাল স্মৃতি ভান্ডার রয়েছে, বৈজ্ঞানিক কাজেও ব্যবহৃত হয়। সাধারনত: ব্যাংক, বীমা,বিশ্ববিদ্যালয়,গবেষণায় এ ধরনের কম্পিউটার দিয়ে কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। উদাহরন:IBM-3033,Cyber-170,UNIVAC-1180 হচ্ছে মেইনফ্রেম কম্পিউটার।
৩)মিনি কম্পিউটার (Mini Computer)
মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে ছোট এবং মাইক্রো কম্পিউটারের চেয়ে বড় এমন কম্পিউটারকে মিনি কম্পিউটার বলে। মিনি কম্পিউটার আকারে ছোট,টেবিলের উপর বসিয়ে কাজ করা যায়। অল্প সংখ্যক লোক একই সঙ্গে মিনি কম্পিউটারে কাজ করতে পারে।যে সকল প্রতিষ্ঠানে কাজের চাপ বেশি কিন্তু মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারছেন না সে সকল প্রতিষ্ঠানে মিনি কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। সাধারনত:হাসপাতাল,ক্লিনিক,গার্মেন্টস, বহুজাতি কোম্পানি,শিল্প প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে মিনি কম্পিউটার প্রচলন বেশি। উদাহরন:IBM-S/34,PDP-8,LCR S/9290 হচ্ছে মিনি কম্পিউটার।
৪)মাইক্রো কম্পিউটার (Micro Computer)
মাইক্রো শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র। ক্ষুদ্রাকৃতি মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরী সর্বাধিক ব্যবহৃত কম্পিউটার হচ্ছে মাইক্রো কম্পিউটার। সাধারনত একজন লোক একটি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে বলে একে পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি বলা হয়। এ ধরনের কম্পিউটার আকারে ছোট, দামে সস্তা,ব্যবহারে সুবিধা হওয়ার কারনে সকলের নিকট ব্যাপকভাবে সমাদৃত। অফিস,আদালত,হাটে-মাঠে,ঘাটে বিনোদনে সর্বত্রই আজ মাক্রো কম্পিউটারের একক রাজত্ব| উদাহরন:IBM-PC, Apple Macintosh হচ্ছে মাইক্রো কম্পিউটার।
মাইক্রো কম্পিউটারের প্রকারভেদ
১)ডেস্কটপ কম্পিউটার (Desktop Computer)
টেবিলের উপর স্থাপন করে যে কম্পিউটার ব্যবহা করা যায় তাকে ডেস্কটপ কম্পিউটার বলে। মাইক্রো কম্পিউটারকেও ডেস্কটপ কম্পিউটার বলা হয়। সাধারনত:অফিস,আদালতসহ ব্যক্তিগত কাজে এ ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
২)ল্যাপটপ কম্পিউটার (Laptop Computer)
ল্যাপ শব্দের অর্থ কোল। যে কম্পিউটার ল্যাপ বা কোলের উপর স্থাপন্ করে ব্যবহার করা যায় তাকে ল্যাপটপ কম্পিউটার বলে। এ ধরনের কম্পিউটার গুলো ব্যাগে বা ব্রিফকেমে করে সহজে বহন করা যায়। ল্যাপটপ হাটে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে,জলে-স্থলে সর্বত্র সর্বাধিক ব্যবহৃত হচ্ছে।
৩)নোটবুক বা পাম্বটপ (Notebook/Palmtop Computer)
নোটবুকের ন্যায় দেখতে ছোট ্আকৃতির কম্পিউটার গুলোকে নোটবুক বা পামটপ কম্পিউটার বলে। নোটবুক বা নোটবুক বা পামটপ কম্পিউটার গুলো হাতে রেখে কাজ করা যায় এবং পকেটে করে বহন করা যায়। এ ধরনের কম্পিউটার গুলো অনেকটা ক্যালকুলেটর বা মোবাইলে মতো হয়ে থাকে।