রমজান মাসে প্রতি বছর বিশ্বের প্রায় চার থেকে পাঁচ কোটি ডায়াবেটিক রোগী সাওম পালন করেন। কিন্তু এ সময় ডায়াবেটিক রোগীদের নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। এ কারনে রামজান মাস শুরুর আগেই ডায়াবেটিক রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে শারীরিক সক্ষমতা সম্পর্কে যথাযথভাবে নিশ্চিত হয়ে নেয়া জরুরী। এ সময়ের খাদ্যাভ্যাস, ওষুধ গ্রহণের নিয়ম ও প্রাত্যহিক জীবনাচরণ কেমন হবে সে সম্পর্কে চিকিৎসকের সাথে বিস্তারিত যোগাযোগ করতে হবে। সম্ভব হলে পুরো রমজান মাসে জুড়েই চিকিৎসকের নিয়মিত ত্বত্ত্বাবধানে থাকা ভালো।
রমজান মাসে ডায়াবেটিক রোগীদের করণীয় :
১. নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ লেভেল পরীক্ষা করে দেখা: রমজান মাসে ডায়াবেটিক রোগীর নিয়মিত রক্তের গ্লকোজ লেভেল পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সাহরীর দুই ঘন্টা পর এবং ইফতারের এক ঘন্টা আগে গ্লুকোজ লেভেল পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এ সময় যদি গ্লুকোজ লেভেল নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম হয় তাহলে রোজা ভেঙ্গে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও যদি দিনের অন্য কোন সময়ে ডায়াবেটিক রোগীর শারীরিক দুর্বলতা বোধ হয় তাহলেও গ্লুকোজ মেপে দেখতে হবে।
২. খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ: রমজানে বেশি খাওয়া যাবে না। অন্য সময়ের মতোই একই পরিমাণ খাবার খেতে হবে। সাহরীতে দুপুরের খাবারের সমপরিমান খাবার গ্রহণ করতে হবে। সাহরী খেতে হবে যতো দেরীতে সম্ভব আর ইফতার করতে হবে যতো দ্রুত সম্ভব। ইফতারের সময় খুব বেশী খাওয়ার চেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এ সময় কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবার অর্থাৎ যেসব খাবার দীর্ঘসময় ধরে অল্প অল্প করে গ্লুকোজের সরবরাহ করে এমন খাবার পরিমাণ মতো খেতে হবে। যেমনঃ লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, দানাদার শস্য, শস্যবীজ ইত্যাদি। উচ্চ ক্যালরির খাবার যেমন: মিষ্টি, হালুয়া, শরবত, কোমল পানীয় কিংবা ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করতে হবে। রাত ১০-১১ টার দিকে কিছুটা হালকা খাবার খেলে ভাল হয়। আর ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে সাহরি না করে কোনভাবেই সাওম পালন করা উচিৎ নয়।
৩. শারীরিক পরিশ্রম কম করা: ডায়াবেটিক রোগীদের রমজান মাসে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা ঠিক নয়। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে। এ মাসে তারাবী’র নামাজ নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম হিসেবে গণ্য হবে তাই আলাদা করে পরিশ্রম করা জরুরী নয়। যদি হাঁটাহাঁটি করতেই হয় তবে তা সন্ধ্যার পর করাই শ্রেয়।
৪. রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে সাওম ভেঙে ফেলতে হবেঃ ইসলামে জীবনে রক্ষা করাটাও ইবাদাত। তাই শারীরিক অবস্থা খুব বেশি খারাপ হয়ে গেলে কোন দ্বিধা না করেই সাওম ভেঙ্গে ফেলতে হবে। রোজা রাখা অবস্থায় যদি রক্তে সুগারের মাত্রা ৩.৩ মিলিমোল/লিটার এর কম হয় কিংবা দিনের প্রথম ভাগেই গ্লুকোজ এর মাত্রা ৩.৯ মিলিমোল/লিটারের কম অথবা গ্লুকোজ লেভেল ১৬.৭ মিলিমোল/লিটারের বেশি হয় তাহলেও সাওম ভেঙ্গে ফেলতে হতে পারে।
৫. ওষুধের ডোজ ঠিক করা: রমজান মাসে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় দেয়া ওষুধগুলোর ডোজের পরিবর্তন করতে হতে পারে। যেমন: সালফোনাইল ইউরিয়েজ, বাইগুয়ানাইড প্রভৃতি ওষুধ। তবে গ্লিটাজোনের ক্ষেত্রে এই ঝামেলা নেই। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে।
৬. ওষুধ গ্রহণের সময় ঠিক করা:
যারা মুখে ঔষধ খানঃ তাদের ক্ষেত্রে দিনে একবার ওষুধ খেতে হলে ইফতারের পর খেতে হবে। যাদের দিনে দুবার ওষুধ খেতে হয় তাদের ক্ষেত্রে সকালের ডোজটা খেতে হবে ইফতারের পরে আর সাধারন সময়ের রাতের ডোজের অর্ধেক পরিমান ওষুধ খেতে হবে সাহরীর পর।
ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষেত্রেঃ স্বল্পকালীন কর্মক্ষম ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে খাবারের সাথে সাথেই। দিনে একবার নিতে হলে তা নিতে হবে ইফতারের সময়। দুইবার নিতে হলে ইফতারের সময় নিতে হবে সাধারণ সময়ের সকাল বেলার ডোজটি এবং সাহরীর সময় নিতে হবে সাধারণ সময়ে নেয়া রাতের বেলার ডোজের অর্ধেক। তিন ডোজ ইনসুলিন নিতে হলে স্বল্পকালীন কর্মক্ষম ইনসুলিন নিতে হবে ইফতার ও সাহরীর সময়। আর মধ্যবর্তী সময় কার্যক্ষম ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে সন্ধ্যার কয়েক ঘন্টা পর।