মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যে ৪টি খাবার খাওয়া জরুরি – মেনোপজ
নারীদের জীবনে মেনোপজ (রজঃনিবৃত্তি) বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তিয় ব্যাপার। প্রত্যেক নারীর জীবনেই এটি ঘটে থাকে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর যেকোন সময় মেনোপজ হতে পারে। মেনোপজ বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে হরমোন নিঃসরণের স্বাভাবিক নিয়মে পরিবর্তন ঘটে। ফলে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে, হৃদরোগ ওঅস্টিওপোরোসিস (osteoporosis) রোগ হতে পারে। এছাড়া আচরণের পরিবর্তন, যোনির শুষ্কীকরণসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাসিক বন্ধ হবার পরে বেশ কিছু খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে এসব জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নেই মাসিক বন্ধ হবার পর কোন খাবারগুলো খাওয়া জরুরি।
১. রঙ্গিন শাক-সবজি ও ফলমূল
রঙ্গিন শাক সবজি ও ফলমূলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। মাসিক বন্ধ হবার পরে ভিটামিনের অভাবে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। এছাড়া পঞ্চাশোর্ধ নারীদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতেও রঙ্গিন শাক-সবজি ও ফলমূলের ব্যাপক ভূমিকা আছে।
২. ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ডি এর অভাবে ক্যালসিয়ামের পরিপাক ঠিকমত হয় না। এছাড়া এটি হৃদরোগ, হাঁপানি, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ও স্তন ক্যানসার ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্যালোক, শাক-সবজি, মাছের তেল, ডিমের কুসুম ইত্যাদি। বেশিরভাগ নারীই (সাধারণত ৭৫ শতাংশ) ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত সমস্যায় ভোগে। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই এসব সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এর পাশাপাশি দিনের বেশ কিছু সময় রোদ পোহানো যেতে পারে। তবে অবশ্যই তীব্র রোদে অবস্থান করা বা বেশিক্ষণ ধরে রোদ পোহানো ঠিক হবে না। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
৩. ক্যালসিয়াম
আমাদের শরীরে হাড়ের গঠনে ক্যালসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহিলাদের মেনোপজের পর ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা অনেক।কারন এ সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমান কমে যাওয়ায় অস্টিওপোরোসিস (osteoporosis) রোগ হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। মহিলাদের এই রোগ হবার প্রবণতা পুরুষদের থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। পঞ্চাশোর্ধ নারীদের দৈনিক ১২০০ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম খাওয়া প্রয়োজন। ক্যালসিয়ারে প্রধান উৎসগুলো হচ্ছে, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, শাক-সবজি, মাছ, মুরগীর হাড় ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে, মাসিক বন্ধ হবার পরে ক্যালসিয়ামের অভাবে হৃদরোগজনিত সমস্যা বাড়ারও প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
৪. ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড
মাছ বা মাছের তেল ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের দারুণ উৎস। মাসিক বন্ধ হবার পরে মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত রোগ-বালাই বা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো প্রতিরোধে মাছের তেল খুবই কার্যকর। এছাড়া এটা শরীরের ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমান কমিয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। মাছের তেল এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবেও কাজ করে। ফলে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা রয়েছে। যেকোন নারীর মেনোপজের পর প্রতিদিন ১০০০-২০০০ মি.গ্রা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড খাওয়া দরকার। মাছ ও মাছের তেল সহজেই এই চাহিদা পূরণ করতে পারে।