মধ্যযুগ-১

অনুবাদ সাহিত্য
মধ্যযুগে অনুবাদ হয়েছে প্রধানত সংস্কৃত থেকে (মহাভারত, রামায়ণ, ভাগবত), হিন্দী সাহিত্য থেকে এবং আরবি-ফারসি সাহিত্য থেকে।

রামায়ণ:
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে বাল্মীকি (বাল্মীকির মূল নাম দস্যু রত্নাকর) সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ রচনা করেন।
রামায়ণ সাত খন্ডে রচিত, এতে শ্লোকসংখ্যা ২৪০০০।
রামায়ণের প্রথম অনুবাদক পনের শতকের কবি কৃত্তিবাস Iঝা। তিনি হলেন প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ অনুবাদক। কৃত্তিবাসের রামায়ণের অন্য নাম ‘শ্রীরাম পাÂvলী’।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী সতের শতকে রামায়ণ অনুবাদ করেন।

মহাভারত
মহাভারতের মূল রচয়িতা কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন৤ বেদ এর ব্যাখ্যা করেছিলেন বলে তাuর অপর নাম বেদব্যাস।
মহাভারত আঠার খন্ডে রচিত এবং এর শ্লোক সংখ্যা ৮৫০০০।
মহাভারতের প্রথম অনুবাদক ষোল শতকের কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর। তার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পরাগল খাuন। কবীন্দ্র পরমেশ্বর এর মহাভারতের নাম ছিল পরাগলী মহাভারত।
মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশীরাম দাস৤

ভাগবত
ভাগবত বার খন্ডে রচিত এবং এর শ্লোকসংখ্যা ৬২০০০। এই গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেন মালাধর বসু।
এজন্য তিনি বাদশাহ রুকনউদ্দিন বরবক শাহের কাছ থেকে ‘গুণরাজ খান’ উপাধি লাভ করেন। তাuর ভাগবতের নাম ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’।

রোমান্সধর্মী প্রণয়োপাখ্যান
ইরানি কবি ফেরদেৌসীর ইউসুফ-জোলেখা কাব্যের বাংলায় অনুবাদ করেন শাহ্ মুহম্মদ সগীর, আবদুল হাকিম, গরীবুল্লাহ।
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম মুসলমান কবি শাহ্ মুহম্মদ সগীর।
ফারসি থেকে লায়লী-মজনু অনুবাদ করেন দেৌলত উজীর বাহরাম খান, মুহম্মদ খায়ের।
ফকীর গরীবুল্লাহ ফারসি থেকে অনুবাদ করেন জঙ্গনামা।
ফারসি থেকে গুলেবকাIলী অনুবাদ করেন নIয়াজিস খান, মুহম্মদ মুকীম।
ফারসি হাতেম তাই থেকে অনুবাদ করেন সাদতুল্লাহ, সৈয়দ হামজা।
আলাIল ফারসি থেকে অনুবাদ করেন সপ্ত পয়কর, সিকান্দার নামা, তোহফা, সয়ফুলমুলক-বদিউজ্জামান।
হিন্দি কবি সাধন রচিত ‘মৈনাসত’ থেকে সতীময়না I লোরচন্দ্রানী প্রথম এবং দ্বিতীয় খন্ড রচনা করেন দেৌলত কাজী। আর তৃতীয় খন্ড রচনা করেন আলাIল।
হিন্দি কবি মালিক মুহম্মদ জায়সী রচিত ‘পদুমাবত’ থেকে পদ্মাবতী রচনা করেন আলাIল।
মধুমালতী অনুবাদ করেন মুহম্মদ কবীর, সৈয়দ হামজা, মুহম্মদ চুহর, শাকের মুহম্মদ।

আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য
দেৌলত কাজী: রাজসভার আদি কবি। আরাকান রাজসভার প্রথম বাঙ্গালী কবি।
আলাIল: রাজসভার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। মধ্যযুগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুসলমান কবি।
কোরেশী মাগন ঠাকুর: রোসাঙ্গরাজের প্রধানমন্ত্রী এবং আলাIলের পৃষ্ঠপোষক। ‘চন্দ্রবতী’ কোরেশী মাগন ঠাকুর রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ।

নাথ সাহিত্য
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে নাথ ধর্মের কাহিনী অবলম্বনে রচিত আখ্যায়িকা কাব্য নাথ সাহিত্য নামে পরিচিত।
নাথ সাহিত্যের প্রধান কবি শেখ ফয়জুল্লাহ। শেখ ফয়জুল্লাহ রচনা করেন গোরক্ষ বিজয়।
নাথ সাহিত্যের অন্যান্য কবি হলেন শ্যামদাস সেন, ভীমসেন রায়, দুর্লভ মল্লিক, ভবানী দাস, শুকুর মাহমুদ।
নাথ সাহিত্য সংগ্রহ এবং সম্পাদনা করেছেন আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ।

মর্সিয়া সাহিত্য
মুসলমান সংস্কৃতির নানা বিষাদময় কাহিনী তথা শোকাবহ ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে মর্সিয়া সাহিত্যের উদ্ভব হয়েছে।
মর্সিয়া সাহিত্যের আদি কবি শেখ ফয়জুল্লাহকে মনে করা হয়। তিনি ‘জয়নবের চেৌতিশা’ নাম গ্রন্থটি রচনা করেন।
মর্সিয়া সাহিত্যের অন্যান্য কবিগণ ছিলেন দেৌলত উজির বাহরাম খান, মুহম্মদ খান, হায়াত মামুদ, জাফর হামিদ।

বৈষ্ণব পদাবলী
পদ বা পদাবলী মূলত বৈষ্ণবীয় ধর্মের গূঢ় বিষয়ের বিশেষ সৃষ্টি।
বৈষ্ণব পদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি চার জন- বিদ্যাপতি, চন্ডীদাস, গোবিন্দ দাস এবং জ্ঞানদাস।
বিদ্যাপতি বৈষ্ণব পদাবলীর আদি রচয়িতা এবং প্রথম অবাঙ্গালী কবি।

শায়েব এবং কবিয়ালা
আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এবং উনিশ শতকের প্রতমার্ধে রাষ্ট্রিক, আর্থিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের মুখে কলকাতার হিন্দু সমাজে ‘কবিIয়ালা’ এবং মুসলমান সমাজে ‘শায়ের’ এর উদ্ভব ঘটে।
এ কবিয়াল এবং শায়েররা যে সাহিত্য রচনা করেছে তাকে দোভাষী সাহিত্য বলে।
গোuজলা গুই হলেন কবিগানের আদিগুরু।
দোভাষী বাংলায় রচিত পুuথি সাহিত্যেকে বটতলার পুuথি বলা হয়।

পুথিসাহিত্য
অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আরবি-ফারসি শব্দমিশ্রিত এক ধরনের বিশেষ ভাষারীতিতে যে সব কাব্য রচিত হয়েছিল তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘পুথি সাহিত্য’ নামে চিহ্নিত।
পুথি সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবিগণ হচ্ছেন- কবি কৃষ্ণরাম দাস, ফকির গরীবুল্লাহ, সৈয়দ হামজা।
পুথি সাহিত্যের প্রাচীনতম লেখক সৈয়দ হামজা।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top