বাংলা ভাষা এবং বাংলা লিপি
1. বাংলা ভাষার আদি উৎস- ইন্দো ইউরোপীয়
2. বাংলার আদি অধিবাসীদের ভাষা ছিল অস্ট্রিক এবং আর্যদের ভাষার নাম ছিল প্রাচীন বৈদিক ভাষা।
3. অধিকাংশের মতে, খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়। তবে, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়।
(অপভ্রংশ বলতে মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষার (তথা প্রাকৃত ও পালি ভাষার) পরবর্তী ঐতিহাসিক ধাপকে বোঝায়।সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ পতঞ্জলির মহাভাষ্য গ্রন্থে সর্বপ্রথম “অপভ্রংশ” শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত কিছু অশিষ্ট শব্দকে নির্দেশ করার জন্য শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। পতঞ্জলি যাকে অপভ্রংশ বলতেন, বর্তমানে তাদেরকে পালি ও প্রাকৃত বলা হয়। কোন কোন প্রাচীন বৈয়াকরণ অপভ্রংশকে আলাদা ভাষা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। তবে বর্তমান ভাষা গবেষণায় অপভ্রংশকে প্রাকৃতের শেষ স্তর হিসেবেই গণ্য করা হয়। বর্তমান ভাষাবিদদের মতে সমস্ত প্রাকৃত ভাষারই শেষ স্তরটি হল অপভ্রংশ এবং এই অপভ্রংশগুলি থেকেই সমস্ত নব্য ইন্দো-আর্য ভাষা উদ্ভূত হয়েছিল।)
4. ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, মাগধী প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব এবং ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, গেৌড়ী প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব।
5. দশম থেকে চতুর্দশ শতাব্দীকে বাংলা ভাষার আদিস্তরের স্থিতিকাল ধরা হয়।
6. বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।
7. ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর মোট শাখা দুইটি। যথা- কেন্তম এবং শতম।
8. ভারতীয় লিপিমালা মোট দুইটি। যথা- ব্রাক্ষী লিপি এবং খরোষ্ঠী লিপি।
9. ব্রাক্ষী লিপি হতে বাংলা লিপি এবং বর্ণমালার উদ্ভব হয়।
১৮শ শতকের পূর্বে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পর্তুগিজ মিশনারি পাদ্রি ম্যানুয়েল দ্য আসুম্পসাও Vocabolario em idioma Bengalla, e Portuguez dividido em duas partes নামে বাংলা ভাষার প্রথম অভিধান ও ব্যাকরণ রচনা করেন; ১৭৩৪ থেকে ১৭৪২ সাল পর্যন্ত ভাওয়ালে কর্মরত অবস্থায় তিনি এটি লিখেছিলেন। [৮] ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হালহেড নামের এক ইংরেজ প্রাচ্যবিদ বাংলার একটি আধুনিক ব্যাকরণ লেখেন, (A Grammar of the Bengal Language (১৭৭৮)) যেটি ছাপাখানার হরফ (type) ব্যবহার করে প্রকাশিত সর্বপ্রথম বাংলা গ্রন্থ। [১] বাঙালিদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায় ছিলেন প্রথম ব্যাকরণ রচয়িতা; তাঁর গ্রন্থের নাম “Grammar of the Bengali Language” (১৮৩২)। এ সময়ে ক্রমশ সাধুভাষা থেকে সহজতর চলিতভাষার প্রচলন বাড়তে থাকে।