গরমে সুস্থ থাকার উপায়
গরমে সুস্থ থাকতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, তীব্র গরমে স্বাস্থ্যের ওপরে যে প্রভাব পড়ে, এতে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া হিটস্ট্রোকের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্য গত সমস্যা এডাতেঃ
– কারও যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও মাথা ঝিমঝিম করে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
– গ্রীষ্মের অতিরিক্ত গরমে ঘামাচির সমস্যা বাড়ে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অতিরিক্ত গরমে প্রচুর পানি পান করা উচিত। প্রতিদিন কমপক্ষে দুবার গোসল করা প্রয়োজন। প্রতিদিন অন্তত একবার গোসলের সময় সাবান মাখতে হবে। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে।
-গরমের সময়ের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হিটস্ট্রোক। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিটস্ট্রোক বলে। হিটস্ট্রোক এড়াতে যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন। পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয়, যেমন: খাবার স্যালাইন, ফলের রস ইত্যাদিও পান করতে হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয়, যেমন: চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।
-গরমকালে গায়ে কোনোরকম তেল মাখবেন না। এতে অ্যালার্জি, র্যাশ কিংবা ঘামাচির পরিমাণ বাড়তে পারে।
-রোদের তাপে শরীর ট্যান পড়ে যাওয়া গরমকালের একটা বড় সমস্যা। তাই বাইরে বেরনোর সময় অবশ্যই ফেস প্যাক লাগিয়ে বেরোবেন। মুখ কিংবা শরীরের বাকি অংশের ট্যান তুলতে ব্যবহার করুন ঘরোয়া পদ্ধতিতে বানানো ফেস প্যাক। মুলতানি মাটি, গোলাপ জল, শশার রস, টমেটোর রস ট্যান তুলতে খুবই সাহায্য করে।
খাবারঃ
– গরমে প্রচুর সবজি খেতে পারেন। শসা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, লাউ, শাক-পাতা আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
– তৃষ্ণা না পেলেও প্রচুর পানি পান করুন। পানি ছাড়াও ডাব, লেবুপানি, দই প্রভৃতি খেতে পারেন। এতে শরীর আর্দ্র থাকবে। তবে রাস্তাঘাটে একেবারেই ফ্রুটজুস খাবেন না। কারণ এইসব ফ্রুটজুস থেকে পেটে নানারকম ইনফেকশন হতে পারে। ডাইরিয়া কিংবা জন্ডিস হওয়ার ভয়ও থাকে। বাইরের গরম থেকে এসে সঙ্গেসঙ্গে ঠান্ডা কিছু খাবেন না। আগে শরীরকে ঠান্ডা হতে দিন। নরমাল টেম্পারেচারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা পানি বা এ জাতীয় জিনিস খেতে পারেন। তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয়, যেমন: চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।
– উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারের পরিবর্তে অল্প অল্প খান। খুব তেলমশলা যুক্ত খাবার খাবেন না। এমন খাবার খান যা সহজে হজম হবে।
– গরমের দিনে খাবার সামান্য এদিক-ওদিক হলেই পেটব্যথা হয়, পেট কামড়ায়, হজমে গোলমাল দেখা দেয়। বাইরের খাবার খাওয়ার আগে সচেতন থাকুন। গরমে সহজেই খাদ্যদ্রব্য দূষিত হয়। বাড়ে মাছি ও পোকামাকড়ের বিস্তার, যা রোগবালাই ছড়াতে সাহায্য করে। এসবের ফলে বাড়ে পানি ও খাবারবাহিত রোগের প্রকোপ। এর মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো জন্ডিস। জন্ডিস থেকে বাঁচতে, বিশেষ করে রাস্তার খোলা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
পোশাকঃ
– হালকা, ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের সুতি কাপড় পরবেন। খুব গাঢ় রংয়ের বদলে একটু হাল্কা রংয়ের পোশাক পরলে অনেকসময় গরমে তা আরামদায়ক হয়।
অন্যান্য প্রস্তুতিঃ
– সরাসরি রোদে যাওয়া থেকে বা অধিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে বেলা ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত সরাসরি রোদে যাবেন না। এই সময়টা দিনের সবচেয়ে বেশি গরম থাকে।
– সূর্যের আলো থেকে চোখ সুরক্ষার জন্য রোদচশমা ব্যবহার করুন। এ ছাড়া সূর্যের আলোয় সরাসরি যাওয়ার পরিবর্তে মাথায় ছাতা, টুপি, পায়ে জুতা-স্যান্ডেল ব্যবহার করুন।
– বাইরে থেকে ঘেমেনেয়ে এলে যত দ্রুত সম্ভব গোসল করে ফেলুন। নইলে শরীরে জমাট বাঁধা ঘামের থেকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। তাছাড়া ঘাম বসে গেলে সর্দি, কাশি, জ্বর হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। সুযোগ থাকলে একাধিকবার গোসল করতে পারেন। বিশেষ করে, ঘুমানোর আগে গোসল করে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কম থাকবে।
– ঘর যাতে ঠান্ডা থাকে এবং ঘরে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে পারে, সে সুযোগ রাখবেন।