ইসলাম ও সমসাময়িক বিরুদ্ধ মতাদর্শ

ইসলাম ও সমসাময়িক বিরুদ্ধ মতাদর্শ

‘বিরুদ্ধ মত’ শব্দটা আজ এতই অপ্রিয় যে, যে কেউ কোন ব্যক্তি বা ধারণার বিরুদ্ধে তাকে আনতে চাইলে আমাদের ‘আলোকপ্রাপ্ত উদার নীতিকরা’ তাকে গোঁড়া এবং ধর্মোম্মাদ বলে আখ্যায়িত করেন। প্রাচীন ধর্মমতের আমন্ত্রণকে যতই গালাগাল দেয়া হেকা না কেন যেখানে তার আমন্ত্রণ অপরিহার্য এবং যুক্তিসংগত সেখানে তার আগমন ঠেকিয়ে রাখা যায় না। খৃস্টান মিশন এবং পশ্চিমা প্রাচ্যবিদরা আমাদের জন্যে জোড়াতালি দেয়া নতুন ধরনের ইসলাম চালুর প্রচেষ্টায় আমাদের দেশয়ি আধুনিকতাবাদীদের পূর্ণ সমর্থন করেন।

ডঃ কেনেথ ক্র্যাগ তার ‘কল অফ দি মিনারেট’ এ বলেছেন, “ইসলামের আবির্ভাবকালে অনৈসলামী ভাবধারা প্রতিরোধে রক্ষণশীলরা তত্বগত দিক থেকে সঠিক ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই। ওহি থেকে সৃষ্ট মুসলিম আইনের ভিত্তি প্রয়োগের উপযোগী, পরিণামদর্শী এবং সাংসারিক বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিল, সহস্রাধিক বছর পরে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সবকিচু সংশোধন, প্রতিযোজন এবং পরিবর্ধন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আধুনিক মন যখন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ইসলামের প্রকৃতির খৃষ্টীয় পরিবর্তন বা জীবনে তার প্রযুক্ততা অস্বীকার করার ব্যাপারে সর্কতা প্রকাশ করে তখন তারা সঠিক পথে চলে।

অতএব আমাদেরকে (খৃষ্টান মিশনারী) সহানুভূতির সঙ্গে ইসলামকে সত্যিকার গণতন্ত্র, সঠিক সমাজতন্ত্র, নির্দোষ পুঁজিবাদ এবং স্থাযী শান্তির সমপর্যায়ে দেখতে প্রস্তুত থাকতে হবে। লর্ড ক্রমারের বিখ্যাত এবং বেকুবী ধারণা ‘সংস্কার হলে ইসলাম থাকে না’ এই মন্তব্যের ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। আমরা চাইনা এবং তা ঠিকও নয় যে এক কালে ইসলাম যেভাবে ছিল এখনও সেইভাবে অবিকৃত থাকবে”।

এর অর্থ হচ্ছে আমাদের দেশীয় আধুনিকতাবাদীরা ধর্মনিরপেক্ষতা ও বস্তুবাদের সঙ্গে ইসলামকে জোর করে সামঞ্জস্য বিধানের জন্যে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তাতে খৃষ্টান মিশন এবং বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতা করছেন। বস্তুতঃ  তারা ওদেরই দায়িত্ব সম্পাদনের ঠিকাদারী নিয়েছেন।

ইসলাম প্রিয় প্রতিটি পণ্ডিতের দায়িত্ব হচ্ ইসলামের নিরঙ্কুশ আবহমানতা, সার্বজনীনতা, চূড়ান্ত আত্মনির্ভর ও মানব রচিত আদর্শ থেকে তাকে স্বাধীন রাখার জন্যে সর্বসম্মত প্রচেষ্টা চালানো। কোরআন এবং সুন্নাহর বর্ণিত বৈশিষ্ট্রের যথার্থ হেয় করার যে কোন প্রচেষ্টা প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধী হিসেবে সরাসরি প্রত্যাখ্যঅন করা উচিৎ। উম্মাতের মতবিরোধ পরিহার করার জন্যে বিরুদ্ধ মতবাদকে ব্যক্তিগত বা দলের পর্যায়ে বিবেচনা করা উচিৎ নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি নিজেকে উম্মাতের অংশ জ্ঞান করেন এবং আল্লাহর একত্ব ও রাসূলের (সা) শেষ নবুয়তকে প্রকাশ্যে অস্বীকার না করন তাকে আমরা উম্মতের বহির্ভূত করতে পারি না। কোন ব্যক্তির চূড়ান্ত বিচারের ভার আল্লাহর হাতে। অবশ্য একটি আধুনিক ইসলাম বিরুদ্ধ আন্দোলনকে শীগগীর নিন্দে করা হলে সত্যিকার ইসলাম সম্পর্কে আমাদের বংশধরদের মধ্যে কোন সন্দেহ দানা বেঁধে উঠতে পারবে না। এই ধরনের সিদ্ধান্তে বিলম্ব ইসলামের কোন নির্ধারিত শিক্ষা নেই এবং তা মুসলমান নামধারী শাসকের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল- এই ধারণাকেই জোরদার করবে।

আধুনিকতাবাদী আন্দোলনের সবচাইতে অশুভ প্রচেষ্টা হচ্ছে আধুনিক চিন্তার আলোকে ইসলামের পুনঃব্যাখ্যা। তাদের মনোমোহিনী সঙ্গীত হচ্ছে ‘সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে ইসলামকেও পরিবর্তন করতে হবে’। ‘প্রগ্রতি’তে এরা এতই আচ্ছন্ন যে, যে কোন মামুলি পরিবর্তনকেই তারা বিরাটগুণ মনে করেন। তারা কখনো ভাবেন না যে এই পরিবর্তন আমাদের কল্যাণ কি অকল্যাণ আনছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে ইসলামের পরিবর্তন করতে হবে তাতে যে ক্ষতিই হোক না কেন। তাদের দৃষ্টিতে একমাত্র গুণ হচ্ছে বাতাসের অনুকূলে ভেসে যাওয়অ। কোন দিকে যাচ্ছে সেটা বড় কথা নয়।

পশ্চিমারা যদি গান, নাচ, ছবি এবং মূর্তি ভালবাসে তাই সত্যিকার (?) ইসলামী এবং মুসলমানদেরকেও তা করতে হবে। পুঁজির সুদ যদি আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তি হয় অনগ্রসরতা ও অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠে প্রগতিশীল ও আধুনিক হওয়ার জন্যে মুসলিম দেশেও তা চালূ করতে হবে। সর্বাধুনিক ফ্যাশন যদি আধুনিক জীবনের প্রবণতা হয় তাহলে তাকে ইসলামী পোষাক ঘোষণা করে আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। খৃষ্টান মিশনারীরা যদি পর্দাকে তথাকথিত নারী অবনতি ও হীনমন্যতার প্রতীক আখ্যায়িত করে নিন্দে করে, ইউরোপ ও আমেরিকার মত নারী মুক্তির সহায়তা করার জন্যে আমাদেরকে তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

আধুনিকতাবাদীরা যদি বহুবিবাহ এবং তালাকের সাহায্যে বিবাহ বিচ্ছেদকে অসহনীয় অন্যায় বলে, তাহলে আলোকপ্রাপ্ত এবং প্রগতিশীল হওয়ার জন্যে মুসলিম বিশ্বকেও সেই ভাবে মুসলিম পারিবারিক আইনের পরিবর্তন করতে হবে। ডঃ কেনেথ ক্রাগ লিখেছেনঃ “সাদারণভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যে, সমান আচরণের শর্তে চার স্ত্রী গ্রহণের কোরআনিক অনুমতি প্রকৃতপক্ষে একাধিক স্ত্রী গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা। বাইবেলের সমালোচনায় যে ব্যাখ্যাই দেয়া হোক না কেন, ফলাফল খুবই কাঙ্খিত।

ডঃ কেনেথ ক্র্যাগ এবং আগ্রহীদের জন্যে এটি কাঙ্খিত। এই ধরনের ভ্রান্তিপূর্ণ যুক্তিতে কতখানি বুদ্ধিবৃত্তিক অসাধুতা এবং কপটতা আছে তাতে কিছু এসে যায় না। লক্ষ্যই কার্য পদ্ধতির যথার্থ নির্ণায়ক।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you
Scroll to top
error: Content is protected !!