ফরেক্স মার্কেট বেসিক-০৩

পিপ: পিপ হল একটা কারেন্সি পেয়ারে সবচেয়ে ছোট অংকের পরিবর্তন। ১ পিপ = ০.০০০১ এবং ২ পিপ = ০.০০০২। উদাহরনস্বরূপ যদি EUR/USD ভ্যালু ১.১৩৫৪ থেকে ১.১৩৫৫ তে যায় তাহলে একে ১ পিপ গননা করা হয়। অর্থাৎ কোনো পেয়ারের প্রাইস ভ্যালুর ৫ম ডিজিটকে পিপ আর ৬ষ্ঠ ডিজিটকে পিপিটিস বলা হয়।

লট বা ভলিউম গননা করা: 

মেটাট্রেডারে ডিফল্ট হিসেবে ০.০১, ০.০২, ০.০৩, ০.০৪, ০.০৫, ১.০০, ২.০০, ৩.০০, ৪.০০, ৫.০০, ৬.০০, ৭.০০, ৮.০০ এই তেরটি ভলিউম বা লট সাইজ দেয়া থাকে। কিন্তু আপনি আপনার পছন্দমত ভলিউম ঠিক করে দিতে পারবেন।

সাধারণত প্র্রতি ১ পিপ পরিবর্তনের জন্য নিম্নোক্ত ভলিউমের জন্য লাভ/লসের পরিমান:

০.০১ লট বা ভলিউম = ১০ সেন্ট লাভ বা লস

০.০৫ লট বা ভলিউম = ৫০ সেন্ট লাভ বা লস

০.১ লট বা ভলিউম = ১ ডলার লাভ বা লস

১.০০ লট বা ভলিউম = ১০ ডলার লাভ বা লস

 

লিভারেজ: ব্রোকার আপনার অল্প অর্থের বিপরীতে আপনাকে বড় অঙ্কের অর্থ দিবে যাতে আপনি ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করে লাভ করতে পারেন। আপনার ব্রোকার আপনাকে দেয়া অর্থ ফেরত নেবে। এর কারন হল ব্রোকার আপনাকে অর্থ ধার দেয় ট্রেড করতে আর যখন আপনি ট্রেড ক্লোজ করেন, তখন ব্রোকার তার টাকা আবার ফেরত নিয়ে যায়। আপনি ব্রোকারে যখন একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করবেন তখনই লিভারেজ ঠিক করে দিতে হয়।

ধরুন আপনার কাছে $১০০০ আছে। EUR/USD এর বর্তমান মূল্য ১.১৩৫৫০। আপনি ০.১ লট (অর্থাৎ $১ প্রতি পিপ) কিনতে চাচ্ছেন। আপনার পছন্দসই লেভারেজ হল ১:১০০। এর মানে ১০,০০০ ইউনিট EUR/USD কিনতে যা লাগবে আপনার ব্রোকার আপনাকে তার ১% এর বিনিময়ে সেই ট্রেড শুরু করতে দিবে। তাহলে দেখি:

১ মাইক্রো লট EUR/USD কিনতে প্রয়োজন $১১৩৫৫

আপনার একাউন্টে আছে $১০০০

লেভারেজ হল ১:১০০ মানে EUR/USD এর প্রকৃত মূল্যের ১% এর বিনিময়ে আপনি এই ট্রেডটি শুরু করতে পারবেন।

$১১৩৫৫ এর ১% হল $১১৩.৫৫

আপনার ব্রোকার $১১৩.৫৫ নিয়ে আপনাকে ট্রেড শুরু করতে দিবে। এই $১১৩.৫৫ আপনি আপনার একাউন্টে মার্জিন হিসেবে দেখবেন। আপনি যখন ট্রেড ক্লোজ করে দিবেন তখন আপনার ব্রোকার আপনার একাউন্টে $১১৩.৫৫ ফেরত দিয়ে দেবে।

লাভ-লোকসান কিভাবে হিসাব করবেন?

আপনি ১.১৩৫৫০ তে EUR/USD ০.১ লট (অর্থাৎ $১ প্রতি পিপ) কিনেছিলেন ।

EUR/USD ১.১৩৭০০ তে যাওয়ার পর আপনি ট্রেড ক্লোজ করে দিলেন।

আপনার লাভ হল ১.১৩৭০০-১.১৩৫৫০ = ১৫ পিপস X $১ প্রতি পিপ = $১৫

এখানে স্প্রেডের খেলাও ছিল। আপনি যখন বাই করেন তখন আসক প্রাইসে বাই করেন আর সেই ট্রেড যখন ক্লোজ করেন তখন বিড প্রাইসে ক্লোজ করেন। ঠিক উল্টাভাবে আপনি যখন সেল করেন তখন বিড প্রাইসে সেল করেন আর সেই ট্রেড যখন ক্লোজ করেন তখন আসক প্রাইসে ক্লোজ করেন।

 

মেটাট্রেডার পরিচিতি: মেটাট্রেডার (এমটি) ৪ অথবা ৫ হল একটা ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম যা অনেক ব্রোকার ব্যবহার করে থাকে। ট্রেডাররা এটা রিয়েল টাইমে কারেন্সি প্রাইস দেখতে, ট্রেড ওপেন অথবা নিয়ন্ত্রন করতে, টেকনিক্যাল অথবা ফান্ডামেন্টাল অ্যানালিসিস করতে। মেটাট্রেডারের সুবিধা হল যে এটা প্রচুর কারেন্সি পেয়ার এবং ইনডিকেটর পছন্দ করার সুযোগ রয়েছে। শুধু তাই না, এতে চার্ট কাস্টমাইজ করার সুবিধা আছে আর এটা নিউবি ফ্রেন্ডলি।

মেকানিক্যাল ট্রেডাররা তাদের এক্সপার্ট এডভাইজর (ইএ) এমটি ৪ প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করতে পারবে। এটা তাদের জন্য ট্রেডের সুযোগ চিহ্নিত করা সহজ করে দেয়। এমটি প্ল্যাটফর্ম ওয়েবসাইট দিয়ে অ্যাক্সেস করা যায়না। এজন্য আপনাকে কম্পিউটারে অথবা ফোনে প্ল্যাটফর্ম ইন্সটল করতে হবে।

মেটাট্রেডার ডাউনলোড করে ইন্সটল করুন। কিন্তু আপনার ব্রোকারের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনাকে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করার পর আপনি সার্ভার নেম, একাউন্ট নাম্বার পাবেন, সেগুলো দিয়ে মেটাট্রেডার লগইন করুন।

জানি লাইভ অ্যাকাউন্টে ট্রেড করার জন্য আপনি ছটফট করছেন। কিন্তু প্রথমে ডেমো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার জন্য উপদেশ দেব। এভাবে আপনি আপনার কস্ট করে অর্জিত অর্থ হারাবেন না। তাছাড়া, আপনি চাইলেই যেকোনো সময়ে লাইভ অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের অর্থ হারানোর ক্ষমতা রাখেন। আপনাকে কেউ বাধা দেয়ার নেই।

 

বিভিন্ন ধরনের অর্ডার: আপনার ব্রোকার আপনাকে বিভিন্নভাবে ট্রেড অর্ডার প্লেস করার সুযোগ দিবে। এখানে অর্ডার মানে আপনি কিভাবে ট্রেড শুরু ও শেষ করবেন তা বুঝায়।

তিনভাবে ট্রেড অর্ডার দিতে পারেনঃ

১) নিউ অর্ডার বাটনে ক্লিক করে।

২) যেকোনো পেয়ারে ডাবল ক্লিক অথবা রাইট মাউস বাটনে ক্লিক করে।

৩) চার্টে যেকোনো যায়গায় রাইট মাউস বাটনে ক্লিক করে।

ক্লিক করার পর নিচের ছবির মত একটা ডায়ালগ বক্স ওপেন হবে।

Symbol – আপনি কোন কারেন্সি পেয়ার ট্রেড করতে চান সেটা এখানে দেখায়। এখানে ড্রপডাউন লিস্ট থেকে কারেন্সি পেয়ার বাছাই করে নিতে পারবেন।

Volume – আমরা যে লট ( ১ লট= ১০০,০০০ ইউনিট) পড়েছিলাম সেটাকে Volume বলে। এখানে আপনার ট্রেডের সাইজ কত হবে সেটা নির্ধারণ করে নিতে পারবেন।

Stop Loss – প্রাইস যদি একটা নির্দিস্ট পরিমান লস খায় তাহলে ট্রেড নিজে নিজেই ক্লোজ হয়ে যাবে। ট্রেড ওপেন করার সময় ইচ্ছা করলে আপনি স্টপ লস সেট করে দিতে পারেন আবার নাও পারেন অথবা পরেও দিতে পারেন।

Take Profit – প্রাইস যদি একটা নির্দিস্ট পরিমান লাভ পায় তাহলে ট্রেড নিজে নিজেই ক্লোজ হয়ে যাবে। ট্রেড ওপেন করার সময় ইচ্ছা করলে আপনি টেক প্রফিট সেট করে দিতে পারেন আবার নাও পারেন অথবা পরেও দিতে পারেন।

Comment – আপনি যদি আপনার ট্রেডে কোন নোট করতে চান তাহলে তা এখানে করতে পারবেন।

Type – এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের অর্ডার বেছে নিতে পারবেন। নিম্নে এগুলো বিস্তারিত দেয়া হয়েছে।

Sell & Buy Button – এই বাটন ২ টি দিয়ে বাই অথবা সেল দেয়া হয়।

বিভিন্ন ধরনের অর্ডার

ইনস্ট্যান্ট এক্সিকিউশন: আপনি যদি বর্তমান মার্কেট মূল্যে অর্ডার প্লেস করতে চান তাহলে সেটা ইনস্ট্যান্ট এক্সিকিউশনে করতে হয়। উপরের ছবিটা দেখুন। বিড এবং আসক প্রাইস দেয়া আছে। আপনি বাই/সেল যেকোন বাটনে ক্লিক করলে সঙ্গে সঙ্গে ট্রেড শুরু হয়ে যাবে।

Type অপশনের ড্রপ-ডাউন থেকে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো সেট করে দিতে পারবেন।

পেন্ডিং অর্ডার: যদি প্রাইস একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে গেলে আপনি ট্রেড শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে পেন্ডিং অর্ডার ব্যবহার করতে হবে। পেন্ডিং অর্ডারের আবার ধরন আছে।

লিমিট অর্ডার

সেল লিমিট: যখন আপনি বর্তমান প্রাইসের চেয়ে বেশি ভ্যালুতে সেল করতে চান, তখন এটা ব্যবহার করেন। ধরুন EUR/USD এর বর্তমান প্রাইস ১.১৩৫৫০। আপনি সেল করতে চান যখন প্রাইস ১.১৩৪০০ এ যাবে। তখন আপনি সেল লিমিট অর্ডার দেবেন।

বাই লিমিট: যখন আপনি বর্তমান প্রাইসের চেয়ে কম ভ্যালুতে বাই করতে চান, তখন এটা ব্যবহার করেন। ধরুন EUR/USD এর বর্তমান প্রাইস ১.১৩৫৫০। আপনি বাই করতে চান যখন প্রাইস ১.১৩৭৫০ এ যাবে। তখন আপনি বাই লিমিট অর্ডার দেবেন।

স্টপ অর্ডার

বাই স্টপ: যখন আপনি বর্তমান প্রাইসের চেয়ে বেশি ভ্যালুতে বাই করতে চান, তখন এটা ব্যবহার করেন। ধরুন EUR/USD এর বর্তমান প্রাইস ১.১৩৫৫০। আপনি বাই করতে চান যখন প্রাইস ১.১৩৩৫০ এ যাবে। তখন আপনি বাই স্টপ অর্ডার দেবেন।

সেল স্টপ: যখন আপনি বর্তমান প্রাইসের চেয়ে কম ভ্যালুতে সেল করতে চান, তখন এটা ব্যবহার করেন। ধরুন EUR/USD এর বর্তমান প্রাইস ১.১৩৫৫০। আপনি সেল করতে চান যখন প্রাইস ১.১৩৭৫০ এ যাবে। তখন আপনি সেল স্টপ অর্ডার দিবেন।

ট্রেইলিং স্টপ: এটা অর্ডার বক্সে পাবেন না। যখন আপনার অর্ডার প্লেস করা হবে তখন সেই অর্ডারটিতে রাইট মাউস বাটর ক্লিক করুন। সেখানে ট্রেইলিং স্টপ দেখবেন। ট্রেইলিং স্টপ আপনার ট্রেডের স্টপ লস পরিবর্তন করতে থাকে যখন আপনার ট্রেড লাভে থাকে। ধরুন আপনার EUR/USD সেল ট্রেড ১.১৩৫৫০ এ শুরু হল। আপনার স্টপ লস ছিল ১.১৩৭৫০। আপনি ট্রেইলিং স্টপ ২০ পয়েন্ট দিলেন। তাহলে দেখবেন যখনই আপনার ট্রেড বর্তমান স্টপ লস থেকে ২০ পিপের বেশি যায় তখনই আপনার স্টপ লস পরিবর্তন হতে দেখা যায়।

 

ট্রেড মডিফাই করা: সাধারনত মেটাট্রেডারের নিচে “Terminal” নামে একটা উইন্ডো থাকে। যদি না পেয়ে থাকেন তাহলে “CTRL+T” অথবা “View” মেনু থেকে “Terminal” অপশনে ক্লিক করুন। সেখানে আপনি আপনার অর্ডার দেখতে পারবেন এবং সেগুলোকে মডিফাই করতে পারবেন।

ট্রেডে স্টপ লস অথবা টেক প্রফিট যুক্ত/মডিফাই করতেঃ

১) যে ট্রেড মডিফাই করতে চান তার উপরে মাউসের রাইট বাটনে ক্লিক করুন এবং “Modify or Delete Order” অপশন সিলেক্ট করুন।

২) পরবর্তীতে, স্টপ লস এবং টেক প্রফিটের ঘরে যে ভ্যালু বসাতে চান সেটা বসান। বসানোর পরে “Modify” বাটনে ক্লিক করুন।
৩) তারপর একটা কনফার্মেশন পাবেন যে আপনার ট্রেডে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ট্রেড ক্লোজ করার জন্যঃ

১) থেকে যে ট্রেড ক্লোজ করতে চান সেটাতে রাইট মাউস বাটনে ক্লিক করুন এবং “Close Order” অপশনে ক্লিক করুন।

২) যদি ট্রেড ক্লোজ করতে চান তাহলে, বাই সেল অপশনের নিচের হলুদ বাটনে ক্লিক করুন।

৩) ট্রেড ক্লোজ করার পরে আপনার লাভ/লস আপনার ব্যালেন্সের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top