‘ইসলামী’ জাতীয়তাবাদ
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন যে, কেয়ামতের আগে মুসলমানরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইহুদী এবং খ্রীষ্টানদের অনুকরণ করবে। এই ভবিষ্যৎ বাণী কার্যকর হয়েছে। বিধর্মীদের অনুকরণের ক্ষেত্রে সবচাইতে জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের যায়গায় আধুনিক ভৌগলিক, বর্ণ ও ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাকে স্থান দেয়া। সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ বিশ্ব মুসলিম সংহতির পক্ষে যেরূপ ক্ষতির কারণ হয়েছে ঠিক তেমনি ঈমানকে আরেকটা জাতীয়তাবাদ হিসেবে দেখার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। নতুন ‘ইসলামী’ জাতীয়তা জোর দিচ্ছে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের খারাপ দিক, অমুসলমানদের হাতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের দুঃখ দুর্দশা, সর্বোপরি ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা ও পশ্চিমী ধারায় সামাজিক ‘অগ্রগতি’র ওপর। এ ব্যাপারে মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের ধারণা ইসলাম মুসলমানদের তাৎক্ষণিক বস্তুগত কল্যাণের নিমিত্তে অপর একটি রাজনৈতিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পদ্ধতি। তারা কখানো খোদাভিত্তিক, শেষ বিচারের দিন বা পারলৌকিক জীবনের কল্যাণ- অকল্যাণের কথা বলে না।
অমুসলমানদের হাতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের অত্যাচার, ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরের মুসলমানদের দুঃখ-দর্দশার কথা বলার পরক্ষণেই তারা শিল্পোৎপাদনে ক্ষতি করে রোজা রাখার নিন্দা করেন, ঈদুল আযহার দিনে পশু জবাই করে আর্থি ক্ষতির কথা বলেন এবং ‘বৈদেশিক মুদ্রার নিদারুণ’ ঘাটতির অজুহাতে হজ্জযাত্রীর সংখ্যা কমিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন। এর পরও তারা সদম্ভে বলে থাকেন যে, ‘আমরা মুসলমান’। মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের কাছে ইসলাম কোন ধর্ম নয়- আরেকটি রাজনৈতিক শ্লোগান।
ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নেতা ডঃ সাইদ রমজান পরিষ্কার ভাষায় বলেছেনঃ মুসলিম জাতীয়তাবাদীরা কোন সময় বংশগত বিরোধ, বা উগ্র স্বদেশ প্রেমিক এবং কোন সময় ইসলামের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মধ্যে তাদের আবেগের স্ফূরণ দেখতে পান। বস্তুতঃ এটা এ সবের সমষ্টি হতে পারে। এ ধরনের আন্দোলন যদি ফল হয় ‘ইসলামাবাদ’ আরেকটি উগ্রতায় রূপ নেবে। এটা তকন একটি নতুন ধরনের জাতীয়তার জন্ম দেবে। এখন পর্যন্ত আমাদের দাবী হচ্ছে- আমরা মিশরী বা সিরিীয় বা আরব অথবা অনারব। এখন আমরা বলতে শুরু করেছি ‘আমরা মুসলমান’। এ ধরনের আন্দোলনের সাফল্যের অর্থ ইসলামের সাফল্য নয়… এটা কেবলমাত্র স্বদেশপ্রেমে অন্ধ আরেকটি দল সৃষ্টি যা ইসলামী নয়। ইসলাম বিশ্ব প্রভু আল্লাহর কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পনের নাম। জীবনের সবদিককে আল্লাহর আদেশের কাছে সোপর্দ করার নাম। এটা না হলে মুসলমানদের কোন ঐক্যই ইসলামী জামায়াত হতে পারে না।[“Contemporary Islam and Nationalism- A case study of Egypt”. Zafar Ishaq Ansari, The word of Islam vol. VII. No 1-4 E J. Brill, Leiden p. 16.]