চট্রগ্রাম বোর্ড ২০১৯ – ১ম অধ্যায় এর সৃজনশীল প্রশ্ন ১ এর সমাধান
১। শফিক সাহেব তার গবেষণাগারে দিনাজপুরের ঐতিহ্য ধারণের লক্ষ্যে লিচু নিয়ে গবেষণা করে, তার ফলাফল সংরক্ষণ করেন। তিনি গবেষণাগারের প্রবেশমুখে এমন একটি যন্ত্র বসিয়েছেন যেটির দিকে নির্দিষ্ট সময় তাকালে অনুমোদিত ব্যক্তিবর্গ ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন।
ক. স্মার্ট হোম কী? ১
খ) ন্যূনতম ধকল সহিষ্ণু শল্যচিকিৎসা পদ্ধতিটি” ব্যাখ্যা করো। ২
গ. গবেষণাগারের প্রবেশমুখে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উদ্দীপকের গবেষণা কার্যক্রমে তথ্য ও যোগাযাযোগ প্রযুক্তির যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে, বিশ্লেষণপূর্বক সেটির প্রয়োগক্ষেত্র আলোচনা করো। 8
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক। স্মার্ট হোম হল এমন একটি বাসস্থান যেখানে রিমোট কন্ট্রোলিং বা প্রোগ্রামিং ডিভাইসের সাহায্যে বাড়ির হিটিং সিস্টেম কুলিং সিস্টেম, লাইটিং সিস্টেম ও সিকিউরিটি কন্ট্রোল সিস্টেম ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
খ। ন্যূনতম ধকল সহিষ্ণু শল্যচিকিৎসা পদ্ধতিটি হল ক্রায়োসার্জারি। এটি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে অত্যন্ত নিন্ম তাপমাত্রায় শরীরের অস্বাভাবিক বা রোগাক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করা যায়। এক্ষেত্রে তরল নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই–অক্সাইড, আর্গন ও ডাই মিথাইল ইথার–প্রোপেন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
গ) গবেষণাগারের প্রবেশমুখে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি হল বায়োমেট্রিক্স । বায়োমেট্রিক্স হচ্ছে এক ধরনের কৌশল বা প্রযুক্তি যার মাধ্যমে মানুষের শারীরিক কাঠামো, আচার–আচরণ, বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতি দ্বারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত বা শনাক্ত করা যায়। বায়োমেট্রিক্স এর মূল কাজই হচ্ছে প্রতিটি মানুষের যে অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে তাকে খুঁজে বের করা এবং প্রতিটি মানুষকে সেই বৈশিষ্ট্যের আলোকে পৃথক পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে সাহায্য করা।
উদ্দীপকে গবেষণাগারের প্রবেশমুখে যন্ত্রের দিকে কিছুক্ষণ তাকানোই দরজা খুলে যাওয়ায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি হলো রেটিনা স্ক্যান প্রযুক্তি। এ পদ্ধতিতে চোখের মনির চারপাশে বেষ্টিত রঙ্গিন বলয় বিশ্লেষণ করে ব্যক্তি সনাক্ত করার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এই পদ্ধতিতে চোখ ও মাথাকে স্থির করে একটি ডিভাইসের সামনে দাঁড়াতে হয়।এ পদ্ধতিতে মানুষের বায়োলজিক্যাল ডেটা পূবে কম্পিউটারের ডেটাবেজে সংরক্ষিত রাখা হয় এবং পরবর্তিতে এসব ডেটা নিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিলিয়ে দেখা হয়। ডেটাতে মিল পেলে তা বৈধ বলে বিবেচিত হয় এবং অনুমতি প্রাপ্ত হয়।
ঘ. উদ্দীপকের গবেষণা কার্যক্রমে তথ্য ও যোগাযাযোগ প্রযুক্তির যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা হল বায়োইনফরমেটিক্স। “এটি বিজ্ঞানের সেই শাখা, যা বায়োলজিক্যাল ডেটা এনালাইসিস করার জন্য কম্পিউটার প্রযুক্তি, ইনফরমেশন থিওরি এবং গাণিতিক জ্ঞানকে ব্যবহার করা হয়। বায়োলজিক্যাল ডেটার মধ্যে জৈব তথ্যে ডিএনএ,জিন,এমিনো এসিড এবং নিউক্লিক এসিডসহ অন্যান্য তথ্য থাকে।
বায়োইনফরমেটিক্স এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে জৈবিক প্রক্রিয়ার অনুধাবন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে অন্যান্য পন্থার পরিবর্তে কম্পিউটারের সাহায্যে জীব বা বস্তুর উন্নয়ন এবং প্রয়োগ ঘটানো। যে সব পদ্ধতি প্রয়োগ করে হিসাব–নিকাশ করা হয় তার মধ্যে রয়েছে প্যাটার্ন রিকগনিশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যালগরিদম, ডেটা মাইনিং, ইমেজ প্রসেসিং, সিমুলেশন, ডিসক্রিট ম্যাথ, কন্ট্রোল থিওরি, সিস্টেম থিওরি, ভিজুয়ালাইজেশন ইত্যাদি।
বায়োইনফরম্যাটিক্স এর প্রয়োগক্ষেত্র হল নিম্নরূপ:
- মাইক্রোবিয়াল জিনোম
- মলিকিউলার মেডিসিন
- পার্সোনালাইজড মেডিসিন
- কৃষি
- ঔষধ উন্নয়ন
- মানব টিকা
- পুষ্টি মান উন্নয়ন।
কুমিল্লা বোর্ড–২০১৯
প্রশ্নঃ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
চিপস সবার খুব প্রিয়। চিপস প্যাকেটজাত করণের সময় একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিপস কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রবেশের পথে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার জন্য একটি ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে।
ক, রোবটিক্স কী?
খ. প্রযুক্তি ব্যবহার করে মটর ড্রাইভিং শেখা সম্ভব– কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে কারখানায় ব্যবহৃত ডিভাইসটির প্রযুক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিপসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ সহ – তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর।
ক. রোবটিক্স কী?
রোবটিক্স হল প্রকৌশল বিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে রোবট সম্পর্কিত ধারণা, নকশা, উৎপাদন, কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে গবেষণা করা হয়।
খ. প্রযুক্তি ব্যবহার করে মটর ড্রাইভিং শেখা সম্ভব– কথাটি ব্যাখ্যা কর। উদ্দীপকে প্রযুক্তি বলতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কী বোঝানো হয়েছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিতে কম্পিউটার ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাহায্যে হুবহু গাড়ি চালানোর সময় চারপাশে থাকা শহরের পরিবেশ বা ব্যস্ত সড়কের একটি কৃত্রিম দৃশ্য তৈরি করা হয়। রাস্তার ড্রাইভিং শেখার ক্ষেত্রে যেমন– নানা রকম দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে, এক্ষেত্রে তার কোন বালাই নেই। কেননা ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ভার্চুয়াল রিয়েলিটির যে পরিবেশে গাড়ি ড্রাইভিং শিখছেন সেটা মোটেই কোন বাস্তব পরিবেশ নয়। তাই এখানে দুর্ঘটনার কোন ঝুঁকি নেই। সুতরাং নিশ্চিতভাবেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মটর ড্রাইভিং শেখা সম্ভব।
গ. উদ্দীপকে কারখানায় ব্যবহৃত ডিভাইসটির প্রযুক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উদ্দীপকে কারখানায় ব্যবহৃত ডিভাইসটির প্রযুক্তিটি হলে বায়োমেট্রিক । বায়োমেট্রিক হলে সেই প্রযুক্তি যেখানে মানুষের অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনার জন্য DNA, আঙুলের ছাপ, চোখের রেটিনা, আইরিশ, কণ্ঠস্বর, চেহারা, হাতের লেখা, ধমনী, হস্তরেখা ইত্যাদি বিষয় সমূহ শনাক্ত ও পর্যালোচনা করা হয়। উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে চিপস কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রবেশের পথে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার জন্য একটি ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তির আঙুলের ছাপ অদ্বিতীয় বিধায় দরজায় বহুল ব্যবহৃত বায়োমেট্রিক ডিভাইস ব্যবহৃত হয়েছে। এর সাহায্যে মানুষের আঙুলের ছাপ ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে তা পূর্ব থেকে রক্ষিত আঙুলের ছাপের সাথে মিলিয়ে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। অর্থাৎ, কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এখানে কর্মীদের আঙুলের ছাপ স্ক্যান করে বিশ্লেষণ বা মেলানোর পর কারখানায় প্রবেশাধিকার পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং, কারখানার প্রবেশ পথে বসান ডিভাইসে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি অবশ্যই বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তি।
ঘ, চিপসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ সহ তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
চিপসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটি হল ন্যানো টেকনোলজি। ন্যানো স্কেলে অতি ক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য কোনাে বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর প্রযুক্তিতে ন্যানো টেকনোলজি বলে। সিলভার ন্যানো পার্টিকেল সমৃদ্ধ পলিমার সমূহ ব্যবহার করে শুকনো খাদ্য সমূহ যেমন চিপস, বিস্কুট ইত্যাদি প্যাকেজিং করা হয় যাতে করে শুকনো খাদ্য দ্রব্য সমূহ দীর্ঘদিন টাটকা ও মচমচে রাখতে পারে। এই প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ নিম্নরূপ
সুবিধা সমূহঃ
১. পানি বিশুদ্ধকরণে ন্যানো ম্যাটেরিয়াল সমূহকে ব্যবহার করা যায়।
২. মেটাল অক্সাইড ন্যানো–ওয়্যার সমূহকে কেমিক্যাল সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৩. সেলফ–অ্যাসেমব্লিং ক্ষমতাসম্পন্ন।
৪. ন্যানো ফেব্রিকেশন এর প্রচলন ঘটিয়েছে। ফলে ইলেকট্রিক বায়ো সেন্সর সমূহের ফেব্রিকেশন করা যায়।
৫. পণ্যের ওজন কমায়, দীর্ঘস্থায়িত্ব পান করে এবং পানি প্রতিরোধী।
অসুবিধা সমূহঃ
১. ন্যানো টেকনোলজি গবেষণা এবং প্রয়োগ অনেক ব্যয়সাপেক্ষ।
২. ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে মারাত্মক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা সব বিদায় যুদ্ধক্ষেত্রে আরও ভয়াবহের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৩. ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পানি এবং বায়ু দূষণ হতে চায় যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রযুক্তি মানুষের শরীরের জন্য খানিকটা ক্ষতিকারক বটে।
৪. এ প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার বিরাট ক্ষতি করতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনার সাপেক্ষে আমার মতামত হলো যদি ন্যানোপ্রযুক্তি বেশ কিছু অসুবিধা ও ক্ষতিকর দিক রয়েছে তথাপি এই প্রযুক্তি আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রা নানা সুবিধাজনক অবদান রেখে থাকতে। সুতরাং এর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখে এই প্রযুক্তির সৎ গবেষণা ও ব্যবহার মানব সভ্যতার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।