যোগাযোগ: নির্ভরযোগ্যভাবে তথ্যের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আদান প্রদানকে বলা হয় যোগাযোগ এবং যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ পরস্পরের সাথে দ্রুতগতিতে যোগাযোগ করতে পারে, তাকে যোগাযোগ প্রযুক্তি বলা হয়।
যোগাযোগ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন–
১। মৌখিক বা বাচনিক যোগাযোগ– মোবাইল ফোন, স্কাইপী, ভাইবার, টেলিকনফারেন্সিং, ভিডিও কনফারেন্সিং, রেডিও, টেলিভিশন, ইত্যাদি।
২। অবাচনিক যোগাযোগ– মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি, চোখের বা হাতের ইশারা ইত্যাদি।
৩। লিখিত যোগাযোগ– ই-মেইল(email- Electronic Mail), এসএমএস(SMS- Short Message Service), ফ্যাক্স ইত্যাদি।
আলোচনার সুবিধার জন্য যোগাযোগ কে ২ ভাগে ভাগ করা যায়-
১। টেলিযোগাযোগ
- ডিজিটাল টেলিফোন নেটওয়ার্ক
Public Switched Telephone Network (PSTN) হল ডিজিটাল টেলিফোনের একটি সাফল্যের ধারা
- মোবাইল কমিউনিকেশন
- স্যাটেলাইট
২। তথ্যযোগাযোগ
- ইন্টারনেট
- ই-মেইল
- সোশাল মিডিয়া
- টেলিকনফারেন্সিং
- ভিডিও কনফারেন্সিং
টেলিযোগাযোগঃ
এটি হল যে কোন দূরত্বে যন্ত্র নির্ভর যোগাযোগ পদ্ধতি
মোবাইল কমিউনিকেশনঃ
টেলিকমিউনিকেশন ও তার বিহীন যোগাযোগের চরম উৎকর্ষিত রুপ হল মোবাইল কমিউনিকেশন। এখানে মোবাইল ফোন একটি সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ফুল ডুপ্লেক্স দ্বিমুখী রেডিও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবহার করে।
সুবিধাঃ
১. দেশে-বিদেশে এসএমএস(SMS-Short Message Service) পাঠানো যায়
২. দেশে-বিদেশে এমএমএস (MMS-Multimedia Message Service) পাঠানো যায়
৩. ইন্টারনেট থাকলে ইমেল পাঠানো যায়
৪. ভিডিও এবং অডিও কল করা যায়
৫. জিপিএস এর মাধ্যমে ঠিকানা নির্ধারণ করা যায়
স্যাটেলাইটঃ
স্যাটেলাইট শব্দের অর্থ হল উপগ্রহ। স্যাটেলাইট হল মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত কৃত্রিম উপগ্রহ। কৃত্রিম উপগ্রহ গুলো পৃথিবী থেকে ৩৫৭৮৬ কি.মি. (২২২৩৬ মাইল) ঊধ্বে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে মিল রেখে হুবহু একই গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ( ২৪ ঘন্টায়)।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। এটি ২০১৮ সালের ১১ মে (বাংলাদেশ সময় ১২ মে) কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশ।
তথ্য যোগাযোগঃ
বর্তমানে তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষ ঘরে বসে ইন্টারনেট, ইমেল, সোশাল মিডিয়া,টেলিকনফারেনসিং ও ভিডিও কসফারেনসিং করে তথ্য আদান-প্রদান করে যোগাযোগ করতে সক্ষম।
ইন্টারনেটঃ
Internet হল International Network. ইন্টারনেট হল সারা পৃথিবী জুরে বিস্তৃত পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি।
১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের অভ্যন্তরীন যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য ARPANET (Advanced Research Project Agency Network) নামক প্রজেক্টের মাধ্যমে ইন্টারনেটের পত্তন ঘটে। ১৯৮২ সালে টিসিপি / আইপি প্রটোকল উদ্ভাবিত হলে ইন্টান্টেটের ধারনা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইন্টারনেটের সুবিধা :
(১) তথ্য ভান্ডার, যে কোন তথ্য যেমন- গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য অনায়াসে ইন্টারনেট থেকে পাওয়া যায়।
(২) তথ্যের আদান-প্রদান সহজ তর হয়েছে। যেমন- ইমেল, সেসাল মেসেজিং
(৩) বিনা খরচে ভিওআইপি কল ও ভিডিও কল করা যায়
(৪) ঘরে বসে অনলাইন লাইব্রেরী থেকে মূল গ্রন্থের কপি পাওয়া যায়, আনলাইন পোর্টাল থেকে সংবাদ পড়া যায়
(৫) অডিও ও ভিডিও গান, সিনেমা দেখাযায় ও সংরক্ষণ করা যায়
(৬) টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়
(৭) ঘরে বসে কেনা- বেচা করা যায়
ইন্টারনেটের অসুবিধা :
(১) ব্যাক্তিগত তথের গোপনীয়তা রক্ষা করা কঠিণ।
(২) সব বই এর ই-সংস্করণ মেলে না। মিললেও তা ব্যয় সাপেক্ষ।
(৩) ভুল বা মিথ্যা তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
(৪) হ্যাকিং,ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, স্পেমওয়্যার এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
(৫) পণ্য ও সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না, আনেক বিক্রেতা প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে
ই-মেইলঃ
ই-মেইল হচ্ছে ইলেকট্রনিক মেইল । ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে বার্তা আদান-প্রদান করার পদ্ধতি হচ্ছে ই–মেইল।
উদাহরনঃ karim@gmail.com
ই-মেইল দুটি অংশ –
১ম অংশ ব্যবহারকারীর নাম- karim
এবং ২য় অংশ ডোমেইন নাম বা কোম্পানির নাম- gmail.com
রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিনসনকে ইমেলের জনক বলা হয়।
ভার্চুয়াল কনফারেন্সিংঃ
ভিন্ন ভৌগোলিক দূরুতে অবস্থান করে টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি যেমন টেলিফোন, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহার করে দুই বা ততোধিক ব্যাক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ বা সভা কার্যক্রম পরিচালনা করার কৌশল হলো ভার্চুয়াল কনফারেন্সিং। এটিকে দুই ভাবে করা যেতে পারে। যথা-
- টেলিকনফারেন্সিং বা অডিও কনফারেন্সিং
- ভিডিও কনফারেন্সিং
টেলিকনফারেন্সিংঃ ভিন্ন ভৌগোলিক দূরুতে অবস্থান করে টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অডিও মাধ্যমে (মাইক্রোফোন, স্পিকার, কম্পিউটার, মডেম ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার) দুই বা ততোধিক ব্যাক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ বা সভা কার্যক্রম পরিচালনা করার কৌশল হলো টেলিকনফারেন্সিং। ১৯৭৫ সালে মরি টারফ এ পদ্ভতি উদ্ভাবন করেন।
ভিডিও কনফারেন্সিংঃ ভিন্ন ভৌগোলিক দূরুতে অবস্থান করে টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ভিডিও মাধ্যমে (ইন্টারনেট, ওয়েবক্যাম,কম্পিউটার, মডেম ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার যেমন জুম, গুগল মিট, টিম, স্কাইপি ) দুই বা ততোধিক ব্যাক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ বা সভা কার্যক্রম পরিচালনা করার কৌশল হলো ভিডিও কনফারেন্সিং।
সুবিধাঃ
১. ভিন্ন ভৌগোলিক দূরুতে অবস্থান করে যোগাযোগ বা সভা করা যায় ।
২. ফলে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয়ী হয়।
৩. হোম অফিস করা যায়।
৪. চিকিৎসা সেবা নেওয়া যায়।
৫. বিভিন্ন ভার্চুয়াল সভা-সমাবেশ করা যায়।
জুমঃ জুম ক্লাউড মিটিং (সাধারণত সংক্ষেপে জুম) হল একটি ভিডিও টেলিকনফারেন্সিং সফটওয়্যার প্রোগ্রাম, যা জুম ভিডিও কমিউনিকেশনস দ্বারা তৈরি হয়েছে। ফ্রি পরিসেবার আওতায় ১০০ জন অংশগ্রহণকারী একযোগে ৪০ মিনিট সময় কনফারেন্সিং সুবিধা পায়। জুম প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে। এটির উদ্ভাবক এরিক ইউয়ান।
মাইক্রোসফট টিমসঃ টিমস প্রাথমিকভাবে ওয়ার্কস্পেস চ্যাট এবং ভিডিও কনফারেন্সিং, ফাইল স্টোরেজ এবং অ্যাপ্লিকেশন ইন্টিগ্রেশন করে। মাইক্রোসফট ১৪ মার্চ, ২০১৭-এ বিশ্বব্যাপী পরিষেবা চালু করে।
গুগল মিটঃ Google Meet (পূর্বে Hangouts Meet নামে পরিচিত) হল একটি ভিডিও-যোগাযোগ পরিষেবা যা Google দ্বারা তৈরি করা হয়েছে ৯ মার্চ ২০১৭ সালে। এখানে ১০০ জন ব্যবহারকারী নিয়ে একসাথে মিটিং বা ক্লাশ করানো সম্ভব।