শরীরের যে কোন স্থানে নরম ফুলে উঠা পিণ্ডকে অ্যাবসেস বা ফোঁড়া বলা হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে এটা পিন্ডের চারপাশের চামড়ায় গাঢ় লালচে কিংবা গোলাপি রঙের উষ্ণ আভা সৃষ্টি করে। সাধারণত ফোঁড়ার একেবারে মাঝখানে পুঁজ দ্বারা পূর্ণ থাকে যা মূলত আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধের কাজে সদা নিয়োজিত শ্বেত রক্ত কণিকা এবং আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়ার মৃত দেহাবশেষ । অর্থাৎ অ্যাবসেস অঞ্চলে জীবাণুর আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ শ্বেত কণিকা জমা হয়ে ফোঁড়ার নরম অংশ তৈরি করে।
সাধারণত ফোঁড়া বা অ্যাবসেসের প্রধান কারণ হল অপরিচ্ছন্নতা। চামড়ার লোমকূপে ধূলা বালির সাথে জীবাণু জমা হয়ে অ্যাবসেস হতে পারে। নিয়মিত গোসল না করলে এবং অপরিচ্ছন্ন স্থানে অবস্থান বা গমন করলে অ্যাবসেস হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য কিছু রোগের উপসর্গ হিসাবেও অ্যাবসেস হয়ে থাকে ।
অ্যাবসেস বা ফোঁড়া হওয়ার কারন:
সাধারণত যেসব কারনে ‘অ্যাবসেস’ বা ফোঁড়া হয়ে থাকে তা হচ্ছে-
১. অপরিষ্কার থাকা ও অপরিচ্ছন্ন জীবন-যাপন,
২. ডায়েবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে,
৩. ক্যান্সার আক্রান্ত হলে বা কেমোথেরাপি নিলে,
৪. দীর্ঘকাল ধরে স্টেরয়েড হরমোন গ্রহণ,
৫. বৃহদন্ত্র বা খাদ্যনালীতে ইনফেকশন,
৬. এইচ আই ভি আক্রান্ত বা এইডস রোগী,
৭. লিউকেমিয়া,
৮. সিকল সেল ডিজিজ,
৯. পুড়ে যাওয়া ক্ষত থেকে,
১০. আঘাতজনিত ক্ষত,
১১. অতিরিক্ত মদ্যপান বা মাদক গ্রহণ।
চিকিৎসা:
অ্যাবসেসের প্রধান চিকিৎসা সার্জারি। তাই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। মূলত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে অ্যাবসেস হয়ে থাকে। তাই সার্জারির পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। ব্যথার জন্য ব্যথা নাশক ওষুধ খেতে হবে। মনে রাখতে হবে, কখনোই ফোঁড়ার ভিতর সূঁচ কিংবা কাঠি প্রবেশ করিয়ে নিজে নিজে চিকিৎসা করার চেষ্টা করা উচিত নয়। কারণ এতে অভ্যন্তরীন টিস্যুতে সংক্রমন ঘটাতে পারে এবং অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে।
অ্যাবসেস থেকে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়লে জ্বর হত পারে। জ্বরের মাত্রা ১০২ ডিগ্রী বা এর চাইতে বেশি হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তাছাড়া মুখমণ্ডলে ১ সেমি-এর চেয়ে বড় ফোঁড়া হলে, বুক-কটিদেশ ইত্যাদি অঞ্চলের লসিকা গ্রন্থি ফুলে উঠলে, রোগীর পূর্বে কেমোথেরাপি নেওয়া, স্টেরয়েড হরমোন গ্রহণ, ডায়ালাইসিস করা বা দীর্ঘকালীন কোনো রোগের ইতিহাস থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হউয়া আবশ্যক।