ডায়াবেটিসের জটিলতা মোকাবেলায় ১০টি সহজ টিপস

শরীরে অগ্ন্যাশয় যদি যথার্থ ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীরে ইনসুলিনের সঠিক কাজ ব্যাহত হয় তাহলে সেটাকে ডায়াবেটিস বলা হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। জীবনঘাতি এই রোগ ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী মহামারীতে পরিণত হয়েছে। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা শরীরের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের উপর আঘাত হানে। তাই ডায়াবেটিসের জটিলতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। সহজ কিছু টিপস নিয়মিত অনুসরণ করলেই ডায়াবেটিসের জটিলতা অনেকখানি এড়ানো ও প্রতিহত করা সম্ভব। চলুন ডায়াবেটিসের জটিলতা মোকাবেলার জন্য কয়েকটি সহজ টিপস জেনে নেই-

১. প্রতিদিন একবার পুরো শরীরে চোখ বুলান: প্রতিদিন গোসলের পর মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুলের নখ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করুন। খেয়াল করুন কোথাও কোন কাটা ঘা,ক্ষত চিহ্ন বা ফুসকুড়ি ইত্যাদি আছে কিনা। সাধারণত শরীরের যেসব স্থান আদ্র থাকতে পারে জীবানু ওসব স্থানেই বাসা বাধতে পারে। তাই এসব জায়গা ভালো করে খেয়াল করুন। স্তনের নিচে, বগলের নিচে, দুই উরুর মাঝে ও আঙ্গুলের ভাঁজে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কোন কাটা ঘা বা ক্ষত চিহ্ন নজরে আসলে দ্রুত চিকিৎসা নিয়ে সারিয়ে তুলতে হবে।

২. খালি পায়ে হাঁটা পরিহার করুন: দরজার পাশেই সবসময় জুতা বা স্যান্ডেল রাখবেন যেন খালি পায়ে কখনোই বাহিরে যেতে না হয়। ঘরের ভেতরেও স্যান্ডেল ব্যাবহার করা ভাল। জুতা পরার আগে ভেতরে ইট-পাথর জাতীয় কিছু আছে কিনা দেখে নিতে হবে। কারন এগুলো থেকে পায়ে ক্ষত হতে পারে।

৩. সবসময় সাথে কিছু খাবার রাখুন: কোন এক বেলার খাবার খেতে ভুলে গেলে, ব্যস্ততার কারনে খাবার গ্রহণে দেরি হলে, বেশি মাত্রায় ইনসুলিন নেয়া হয়ে গেলে কিংবা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারনে ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে সুগারের পরিমাণ হঠাৎ করে খুব কমে যেতে পারে। ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এটা খুব মারাত্মক হতে পারে। এ সময় মাথা ঝিমঝিম করতে পারে এবং অনেকের মাথা ঘোরাতে পারে। এমনকি শরীরে কাঁপুনিও হতে পারে। এই অবস্থা মোকাবেলার জন্য সবসময় সাথে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাবার রাখা প্রয়োজন। যেমন: গ্লুকোজ বিস্কুট, মিষ্টি চকলেট ইত্যাদি।

৪. নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মেপে দেখুন: চিকিৎসকের পরামর্শমত নিয়মিত এবং সময়মত ব্লাড সুগার বা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ মেপে দেখুন। এতে নিজেই নিজের অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকা যায় এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।

৫. ব্যায়ামের আগে ও পরে ব্লাড সুগার মাপুন: যারা নিয়মিত জিমে বা বাসায় ব্যায়াম করে থাকেন তাদের জন্য এটা খুব জরুরি। ব্যায়াম করলে ব্লাড গ্লুকোজ কতটুকু কমে তা এ থেকে বোঝা যাবে। খুব বেশি ব্যায়ামের কারনে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে অবস্থা মারাত্মক হতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

৬. জীবন যাপনের ধরণের সাথে মিলিয়ে ইনসুলিন নির্বাচন করুন: ডাক্তারকে জীবন যাপনের ধরণ বা লাইফস্টাইল সম্পর্কে জানাতে হবে। রোগী যদি খুব ব্যস্ততায় থাকেন কিংবা নিয়ম করে খাবার খেতে না পারেন তবে সে অনুযায়ী ইনসুলিন নিতে হবে। এ ব্যাপারে ডাক্তারের সহায়তা অতীব জরুরি।

৭. খাদ্যতালিকা নতুন করে সাজান: যেসব খাবারে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি বাড়ে না, খাদ্যতালিকায় তা রাখতে হবে। যেমন: মটরশুঁটি, সবুজ শাকসবজি, লেবুজাতীয় ফল, মিষ্টি আলু, টমেটো, বাদাম, টক দই ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখুন। প্রয়োজনে তালিকা তৈরী করে তা দেয়ালে বা ফ্রিজের সাথে ঝুলিয়ে রাখুন।

৮. প্রচুর পানি পান করুন: বেশি মাত্রায় ব্লাড সুগার শরীরে পানির চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। এতে করে ত্বকে শুস্কতা দেখা দেয়। তাই নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

৯. প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন: অনেকে ব্যাস্ততার কারনে বা আলসেমিতে একটানা ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে পারেন না। তারা প্রয়োজনে ১০ মিনিট করে ভাগ করে দিনে তিনবার ব্যায়াম করতে পারেন। ধরুন সকালে একটু ব্যায়াম করার পরে দুপুরে বাচ্চাদের সাথে কিছু সময় খেলা যায়। এরপর বিকালে বাসার নিচে বা পর্কে হালকা পায়চারি করা যায়।

১০. বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বা ফার্স্ট এইড বক্স রাখুন: ডায়াবেটিসের কারণে সামান্য আঘাতও অনেকসময় বড় হয়ে দেখা দেয়। তাই সবসময় হাতের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বা ফার্স্ট এইড বক্স প্রস্তুত রাখতে হবে। বক্সে অবশ্যই ক্ষত পরিস্কার করার জন্য হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকতে হবে। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ও পরিস্কার জীবাণুমুক্ত গজ কাপড় থাকতে হবে।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top