ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাসবাহিত এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার কামড়ে হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ৪-৭ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটি ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে মশার মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে। ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ নয়। এই জ্বর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করে। তবে এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে কয়েকদিনের মধ্যেই সাধারণত ডেঙ্গু পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।
ডেঙ্গু জ্বর কখন বেশি হয়?
ডেঙ্গু জ্বরের সময় মূলত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। বিশেষ করে গরম এবং বর্ষার সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। শীতকালে সাধারণত এই জ্বর হয় না বললেই চলে। শীতের সময় লার্ভা অবস্থায় এডিস মশা অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষার শুরুতে সেগুলো থেকে নতুন করে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত মশা বিস্তার লাভ করে। সাধারণত শহর অঞ্চলে, অভিজাত এলাকায়, বড় বড় দালান কোঠায় এই প্রাদুর্ভাব বেশি। তাই এই এলাকার বাসিন্দাদের ডেঙ্গু জ্বর বেশি হয়। গ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলক কম।
লক্ষণসমূহ:
১. ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়।
২. শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
৩. রোগীর প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকে। চোখের পেছনেও ব্যথা অনুভূত হয়।
৪. জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচদিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে র্যাশ। র্যাশ দেখতে অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো।
৫. রোগীর বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে।
৬. রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং খাওয়ার রুচি কমে যায়।
৭. রোগ জটিল আকার ধারণ করলে অন্য সমস্যার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হতে পারে। যেমন : চামড়ার নিচে, চোখের মধ্যে ও চোখের বাইরে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সাথে, বমির সাথে বা পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত যেতে পারে। পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ায় কালো পায়খানাও হতে পারে।
৮. মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত যেতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এই জ্বর সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। যেমন :
১. শরীরের যেকোনো অংশে রক্তপাত হলে
২. রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে
৩. শ্বাস কষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি জমা হলে
৪. প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে
৫. জন্ডিস দেখা দিলে
৬. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভূত হলে
৭. প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।