পিভোট পয়েন্ট

প্রফেশনাল ট্রেডাররা এবং মার্কেট মেকাররা সম্ভাব্য সাপোর্ট/রেজিস্টেন্স পাওয়ার জন্য পিভট পয়েন্ট ব্যবহার করে থাকে। সহজ কথায় পিভট পয়েন্ট এবং এর সাপোর্ট/রেজিস্টেন্স লেভেলগুলোতে প্রাইস মুভমেন্টের পরিবর্তন ঘটতে পারে। পিভট পয়েন্ট অনেকটা ফিবনাচ্চির মত। অনেক ট্রেডাররা এটা ব্যবহার করে আর সেই লেভেলগুলো অনেকটা স্বপরিপূরক। ফিবনাচ্চি এবং পিভট পয়েন্টের মধ্যে পার্থক্য হল যে পিভট পয়েন্ট চিন্তা নিরপেক্ষ আর ফিবনাচ্চিতে হাই/লো নির্ণয়ে ভিন্নমত থাকে।

 

পিভট পয়েন্ট সর্টটার্ম ট্রেডারদের জন্য প্রয়োজনীয় ট্যুল। ট্রেডাররা শর্টটার্মের ট্রেডে এটা দিয়ে উপকৃত হতে পারে। রেঞ্জবাউন্ড ট্রেডাররা পিভট পয়েন্ট ব্যবহার করে রিভার্সাল চিহ্নিত করতে পারে। ব্রেকআউট ট্রেডাররা কোন লেভেল ব্রেক করা প্রয়োজন সেটা চিনতে পারে। পিভট পয়েন্টের একটা চার্ট-

 

চার্টে দেখতে পারছেন যে সোজা লাইন যেগুলো সাপোর্ট/রেজিস্টান্স হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কি ভালো না?

 

পিভট পয়েন্ট গননা: প্রথম যা শিখবো তা হোল পিভট পয়েন্ট গননা পদ্ধতি। পিভট পয়েন্ট এবং এর সাথের সাপোর্ট/রেজিস্টান্স গননা করা হয় আগের পেরিয়োডের ওপেন, হাই, লো আর ক্লোজ দিয়ে। অনেক ট্রেডাররা নিউইয়র্ক ক্লোজের সময়কে দিনের শেষ হিসেবে নেয়। পিভট পয়েন্ট গননা নিম্নে দেখানো হলঃ 

পিভট পয়েন্ট (পিপি) = (হাই + লো + ক্লোজ) / ৩

 

সাপোর্ট/রেজিস্টেন্স লেভেলগুলোর গননা নিন্মে দেখানো হলঃ

প্রথম লেভেলের সাপোর্ট/রেজিস্টেন্স

রেজিস্ট্যান্স ১ (R1) = (২ x পিপি) – লো

সাপোর্ট ১ (S1) = (২ x পিপি) – হাই

২য় লেভেলের সাপোর্ট/রেজিস্টেন্স

রেজিস্ট্যান্স (R2) = পিপি + (হাই – লো)

সাপোর্ট ২ (S2) = পিপি – (হাই – লো)

৩য় লেভেলের সাপোর্ট/রেজিস্টেন্স

রেজিস্ট্যান্স ৩ (R3) = হাই + ২ (পিপি – লো)

সাপোর্ট ৩ (S3) = লো – ২ (হাই – পিপি)

 

পিভট পয়েন্ট দিয়ে রেঞ্জ ট্রেডিং: পিভট পয়েন্টের সবচেয়ে সহজ ব্যবহার হল এটাকে সাধারন সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্সের মত ব্যবহার করা। সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্সের মত এই লেভেলগুলো অনেকবার টেস্ট করে। প্রাইস যতবার এই লেভেলগুলো টাচ করে ফিরে আসে, ওই লেভেলটা তত শক্তিশালী হয়।  যদি একটা পিভট পয়েন্ট না ভাঙে, তাহলে সেটা আপনাকে ভালো ট্রেডের সুযোগ দেখাতে পারে। যদি প্রাইস উপরের রেজিস্ট্যান্স লেভেলের কাছে যায়, আপনি ওই পেয়ার সেল করতে পারেন আর স্টপ লস ওইসব লেভেলের উপরে ব্যবহার করতে পারেন। একইভাবে প্রাইস যখন সাপোর্টের কাছে যায়, আপনি বাই দিয়ে স্টপ লস ওইসব লেভেলের নিচে দিতে পারেন। একটা চার্ট দেখিঃ

উপরের চার্টে দেখছেন যেঃ

  • প্রাইস সাপোর্ট ২ ব্রেক করতে পারছে না।
  • প্রাইস পিপি ব্রেক করে রেজিস্ট্যান্স ১ এর কাছে গিয়েছে।
  • প্রাইস রেজিস্ট্যান্স ১ এর কাছে গিয়ে থেমে গেছে।

কনজারভেটিভ মাইন্ডে যদি এই ট্রেডটা ধরতেন তাহলেঃ

  • সাপোর্ট ২ এর কাছাকাছি বাই করতেন
  • স্টপ লস সাপোর্ট ৩ এর নিচে দিতেন
  • টেক প্রফিট পিপি আর রেজিস্ট্যান্সের মধ্যে দিতেন।

একটা কথা মনে রাখবেন, শুধুমাত্র পিভট পয়েন্টের উপর নির্ভর করবেন না। অন্যান্য মেথড এগুলোকে সাপোর্ট করার জন্য ব্যবহার করুন। যেমনঃ অন্য সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স অথবা ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ব্যবহার করতে পারেন। আর একটা কথা, ট্রেডের সুযোগ সাধারনত সাপোর্ট/রেজিস্টেন্স ১ এর কাছাকাছি পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে প্রাইস সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স ২ টেস্ট করবে এবং খুব কম সাপোর্ট/রেজিস্টেন্স ৩ টেস্ট করবে। শেষমেশ, এটাও মনে রাখবেন যে প্রাইস সবগুল লেভেল একবারে ভেঙ্গে আরও নিচে নামতে পারে।

 

পিভট পয়েন্ট আর ব্রেকআউট: সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্সের মত পিভট পয়েন্টও ব্রেক করবে। পিভট পয়েন্ট দিয়ে রেঞ্জ ট্রেডিং করা যায়, কিন্তু সবসময় না। যখন ওই লেভেলগুলো ভাঙে তখন সেই সুযোগে লাভ বের করে নিন। আগে আমরা ২ ধরনের ব্রেকআউট ট্রেডিং নিয়ে আলোচনা করেছি। তা হল

 

এগ্রেসিভঃ যখন সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স লাইন ব্রেক করে, অর্ডার ওপেন করা। লস খাবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

 

কনজারভেটিভঃ সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স টেস্ট করার জন্য অপেক্ষা করা। ট্রেড মিস করার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

চার্টে দেখি কি হয়ঃ

উপরের চার্টে প্রথমে সেল দিলে ধরা খেতেন। পরবর্তী ২ টা ট্রেডে লাভ হত।

উপরের চার্টে কনজারভেটিভ হয়ে অপেক্ষা করলে ভালো সুযোগ দেখা যাচ্ছে।  এখন ২ টা চার্টে ২ ধরনের ট্রেড করার সুবিধা ও অসুবিধা দেখা যাচ্ছে। এখন মনে মনে বলছেন, তাহলে কোনটা ভালো হবে? এটা নিজে নির্ধারণ করুন।

 

 

ব্রেকআউটে স্টপ লস ও টেক প্রফিট বসানো: স্টপ লসের জন্য এক লেভেল উপরে/নিচের এরিয়াটা একটা ভালো জায়গা। যেমনঃ কনজারভেটিভ চার্টে পিভট পয়েন্টে যদি ট্রেড দিতেন তাহলে রেজিস্ট্যান্স ১ এর উপরে স্টপ লসের একটা ভালো জায়গা হত। এছাড়াও টেক প্রফিটের কথা ভুলবেন না। এটা আপনার উপর যে আপনি কীভাবে আপনার প্রফিট নিয়ন্ত্রন করেন। শেষে বলতে চাই যে, অন্যান্য ট্যুল দিয়ে নিজের ট্রেড সিগন্যালকে আরও জোরদার করে নিন।

 

পিভট পয়েন্ট দিয়ে মার্কেট সেন্টিমেন্ট নির্ণয় করা: এতক্ষণ আমরা পিভট পয়েন্ট দিয়ে সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্সের ব্যবহারের কথা বলছিলাম। পিভট পয়েন্টকে অন্য কাজেও ব্যবহার করা যায়। সেটা হল মার্কেট সেন্টিমেন্ট নির্ণয় করার কাজে। এর মানে হল, এটা আপনাকে ধারনা দিবে যে মার্কেটে ট্রেডাররা বাই না সেলের দিকে বেশী আগ্রহী। পিভট পয়েন্টে যে পিভট পয়েন্ট (পিপি) লাইনটা আছে, সেটা আপনাকে বুলিশ বিয়ারিশ সেন্টিমেন্টের সংকেত দিবে।

 

বুলিশ সেন্টিমেন্ট: প্রাইস যখন পিভট পয়েন্টের উপরে থাকে অথবা প্রাইস পিভট ব্রেক করে উপরের দিকে যায়। চার্টটি দেখুনঃ

নতুন দিন শুরু হয়েছে আর প্রাইস পিভট পয়েন্টের নিচে রয়েছে। সময়ের সাথে প্রাইস নিচে নেমেছে। এখানে ট্রেডারদের সেন্টিমেন্ট বিয়ারিশ ছিল। পরের চার্টটা দেখুন

 

আগের চার্টের মত ডেইলি ওপেন পিভট পয়েন্টের উপরে আর সেদিনের সেন্টিমেন্ট বুলিশ দেখা যাচ্ছে। পরের চার্টটি দেখুনঃ

প্রাইস পিভট পয়েন্ট ব্রেক করেছে, আর দেখা যাচ্ছে যে প্রাইস সেদিন নিচে নেমেছে। কি বুঝলেন? বুঝেছেন যে, পিভট পয়েন্ট একটা জাদুকরী ট্রেডিং ট্যুল তাই না? পিভট পয়েন্টের উপরে বাই, নিচে সেল আর ব্রেক করলে সেন্টিমেন্টে পরিবর্তন। আর কি লাগে, এই কোটিপতি হয়ে গেলাম আর কি!!! আবারও বলছি, সব ট্যুল সবসময় কাজ করে না। মার্কেটে উপর নিচ সবসময় থাকবেই আর তাই নিজেকে সেই অনুযায়ী তৈরি করুন। পিভট পয়েন্ট একা আপনাকে ভালো সিগন্যাল দিতে পারবে না। অন্যান্য ট্যুল যেগুলো আপনাকে মার্কেট সেন্টিমেন্ট সম্পর্কে ভালো ধারনা দিবে এর সাথে যোগ করুন।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top