আধুনিক জীবনে বাড়ছে যন্ত্রের ব্যবহার। মানুষও হয়ে উঠছে যান্ত্রিক। যান্ত্রিক সময়ের ব্যস্ততম মুহূর্তে আপনি হয়তো বসে আছেন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন বা ট্যাবের সামনে। কিংবা চোখ বুলাচ্ছেন খবরের কাগজে বা প্রজেক্ট প্রোফাইলের পাতায়। কেউবা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজে। এমনও হতে পারে, চরম বিরক্তি নিয়ে বসে আছেন ঢাকা শহরের অসহ্য যানজটে। অথবা প্রিয় বন্ধুরা মিলে বসেছেন জমজমাট আড্ডার আসরে। ঠিক ধরেছেন, হাল আমলে শত ব্যস্ততার মাঝেও যাদের অধিকাংশ সময় কাটে বসে বসে তাদের জন্যই এ লেখা।
বিজ্ঞান আসলেই আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা গতিশীল সমাজের ধকলপূর্ণ কাজের বাঁধনে আটকে গেছি। এই বাঁধা জীবনের বেশিরভাগ সময় বসে বসেই কেটে যায়। পড়া-লেখা বা অফিসের কাজ বসেই করতে হয়। এমনকি ক্লান্তি কাটাতে এক কাপ চা হাতে কিংবা বিনোদনের মঞ্চে- আমরা অলস বসেই সময়টা পার করি।
এই বসে থাকা জীবন আমাদের অজান্তেই শরীরকে দিন দিন অকেজো করে দিচ্ছে। শরীরে জমা হচ্ছে অতিরিক্ত চর্বি ও ক্যাফেইন! ফলে নিজেরাই ডেকে আনছি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থুলতা বা ক্যান্সারের মত নানান মরণব্যাধিকে। এছাড়া অতিরিক্ত বসে থাকার কারনে শরীরের অস্থিসন্ধিগুলোতে ক্ষয়ের হার বাড়ে। যার কারনে শরীর ক্রমেই নিস্তেজ ও অলস হয়ে পড়ে।
কিন্তু ভাবুন তো, জীবনটা কি এমনই হওয়া উচিৎ? যদি সত্যিই এ সমস্যা থেকে মুক্তি চান তবে চলুন, পরিত্রাণের কিছু উপায় জেনে নেই-
১) অফিসের টেবিলে বসে হয়ত কাজের চাপে পিষ্ট হয়ে আছেন। বেরিয়ে যাবারও কোন উপায় নেই। তবে টেবিল থেকেই শুরু করুন! প্রতি ঘন্টায় ২০ মিনিট করে দাঁড়িয়ে কাজের অভ্যাস করুন। কিছুক্ষণ জুতা খুলে রাখতে পারেন। নিজে অভ্যাস করুন, অন্যকেও উৎসাহিত করুন। খেয়াল রাখুন, বস দেখছেন না তো?!
২) ফোনে কথা বলছেন? দাঁড়িয়ে বা হেঁটে হেঁটে কথা বলুন।
৩) চেয়ারে বসে আছেন? সোজা হয়ে বসুন। মেরুদণ্ড যেন বাঁকা হয়ে না থাকে। শরীরের নিচের দিকটা পেছনে ঠেকানোর জন্য কুশন বা ছোট বালিশ রাখতে পারেন; চেয়ারেই হোক বা গাড়ীতে। এটা শক্তি ধরে রাখার ভালো উপায়।
৪) কম্পিউটারে কাজের সময় ঘাড়, কাঁধ, কবজি ও চোখ শিথিল রাখুন। একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। ঘন্টায় একবার অল্প সময়ের জন্য ঘাড় ও কাঁধের ব্যায়াম করে নিতে পারেন।
৫) টেবিলে কাজের সময় পা শিথিল করুন। গোড়ালি ও আঙ্গুল নাড়াচাড়া করুন, রক্ত চলাচল ঠিক থাকবে। কবজি, কাঁধ, ঘাড় নাড়ানোতেও উপকার পাবেন।
৬) প্রচুর পানি পান করুন। ব্যস্ততার কারনে ওয়াশরুমের কথা ভুলে গেলে চলবে না! ওয়াশরুমে যাওয়ার পথে হালকা ব্যায়াম করা যায়। ওয়াশরুমে যাবার আগে-পরে দাঁড়িয়েই সহকর্মীদের সাথে কয়েক মিনিট আলাপ সেরে নিতে পারেন।
৭) ধীরে ধীরে ও গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। এক কাপ চায়ের মত তা আপনার মনকে প্রশান্ত ও চাঙ্গা করে তুলবে।
৮) মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে, সামনের কোন দেয়ালে পা ঠেকিয়ে কিছুটা উপরে তুলুন। শরীর সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে এ কাজ করুন। মধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে রক্ত চলাচল ঠিক থাকবে। নিয়ন্ত্রণে থাকবে রক্তচাপ।
৯) দিনে যদি ৮ ঘন্টার বেশি সময় বসে থাকতে হয় তবে খাবারের দিকে নজর দিন। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে সবজির পরিমাণ বাড়ান। আমিষের চাহিদা পূরন করুন। টাটকা ও সজীব খাবার গ্রহণ করুন। প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার, কৃত্রিম চিনি ও মিষ্টিযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকুন।
১০) ব্লাড গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রনে রাখতে বাদাম, পনির, শসা ও গাজর খাওয়া যেতে পারে। সরাসরি মাটি থেকে পাওয়া খাবারগুলো শরীরের জন্য বিশেষ উপকারি।
১১) নিয়মিত জিমে যেতে পারলে ভালো। সম্ভব না হলে পার্ক কিংবা রাস্তা খুঁজে নিন। ডাক্তারের নির্দেশনার আগেই হাঁটার অভ্যাস করুন। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন দৈনিক ২০-৩০ মিনিট করে হাঁটুন। ধীরে ধীরে হাঁটার গতি বাড়ান। এটা হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের জন্য উপকারি।
১২) যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন তবে এখুনি পরিত্যাগ করুন। মনে রাখবেন, ধূমপান কোন সম্মানজনক বিষয় নয়। বরং তা বেশিরভাগ স্বাস্থ্যহানির প্রধানতম কারন।
সর্বোপরি, হাসি-খুশি থাকুন। পরিবারকে সময় দিন। নিজেকে পরিপাটি রাখুন এবং নখ ও চুলের যত্ন নিন। নিজেকে ভালোবাসুন। সম্পর্ক ও ভালোবাসাকে পুঁজি করে নিজের যত্ন নিন, মূল্যবোধ বজায় রাখুন। এতে কেবল নিজেরই নয়, আপনার স্বজন-পরিজন সবারই উপকার হবে।