সুস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে ঘুমানো অত্যন্ত জরুরী। রাতের স্নিগ্ধ ঘুম সারাদিনের কাজের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। ঘুমে ব্যাঘাত হলে জীবনের গতি এলোমেলো হয়ে যায়, মন্থর হয়ে আসে। ঘুম না হলে শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের সমস্যাই হতে পারে। রাতে ঠিকমত ঘুম না হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সারাদিন কেমন যেন অবসাদে পেয়ে বসে। যেকোন কাজে চরম বিরক্তি অনুভূত হয়।
ঘুম না হবার অনেক কারন থাকতে পারে। বেশিরভাগ কারনই সাময়িক। চেষ্টা করলেই সহজেই এসব দূর করা সম্ভব। তবে এমনও কিছু কারনে অনিদ্রা হতে পারে যার জন্য চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হয়। কিংবা ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন: ডিপ্রেশন বা ম্যানিয়ার রোগীদের ঘুম না হওয়া, সিজোফ্রেনিক রোগীদের নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শমত চলতে হবে।
ভাল ঘুম বলতে কি বুঝায়:
১. শোয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যেই ঘুম চলে আসা।
২. দৈনিক রাতে ৬-৮ ঘন্টা (বয়সভেদে) ঘুম হওয়া।
৩. রাতে ১ থেকে ২ বারের বেশি ঘুম থেকে না জাগা।
৪. ঘুম থেকে জেগে কোন ক্লান্তিভাব না থাকা।
ভালো ঘুমের কৌশল:
চলুন রাতে ভালো ঘুমের জন্য কয়েকটি উপায় জেনে নেই-
১. তন্দ্রাভাব না আসা পর্যন্ত বিছানায় না যাওয়া।
২. ঘুম না আসলে অযথা বিছানায় শুয়ে না থাকা।
৩. দিনের বেলা না ঘুমানো।
৪. প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে জাগার চেষ্টা করা।
৫. শোয়ার ঘরটি শুধুমাত্র ঘুমের জন্যই বরাদ্দ রাখা। শোয়ার ঘরে খাবার গ্রহণ, পড়ালেখা বা টিভি দেখার মত কাজগুলো না করা।
৬. শোয়ার ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। যেন তাপমাত্রা খুব বেশি বা খুব কম না হয়। এই ঘরটিকে যেকোন ধরনের তীব্র শব্দ বা শব্দ দূষণ থেকে দূরে রাখাও বাঞ্চনীয়।
৭. বিছানাটি আরামদায়ক (খুব নরম বা খুব শক্ত নয়) হওয়া এবং যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
৮. ঘুমাতে যাবার পূর্বে চা, কফি, এলকোহল বা সিগারেট থেকে দূরে থাকা। সম্ভব হলে এই অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করা।
৯. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং শোয়ার পূর্বে একগ্লাস গরম দুধ পান করা।
১০. ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করা ঘুমের জন্য উপকারী।
১১. ঘুমানোর আগে অন্তত দশ মিনিট বই পড়া।
১২. ঘুমানোর আগে স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার না করা।
১৩. ঘুমের আগে কিছু সময় ধরে প্রার্থনা বা মেডিটেশন করা।
১৪. ঘুমের জন্য সময় মেনে একটি ঘুম ডায়েরি বা sleeping diary রাখা। এতে ডাক্তারের পরামর্শমত নিজেই নিজের অগ্রগতির হিসাব রাখা।
অনিদ্রার এখন খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। অনেকেই এ রোগে ভুগে থাকেন। ঘুমের জন্য কেউ কেউ স্লিপিং পিল বা ঘুমের ওষুধ খেতে চান। ঔষধ খেলে ঘুম হয় ঠিকই। কিন্তু ওষুধের ব্যবহারে এর উপর নির্ভরশীলতা চলে আসতে পারে। একবার নির্ভরশীলতা চলে এলে তা দূর করা অনেক কঠিন। এছাড়া ঘুমের ওষুধের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। তাই ভালো ঘুমের জন্য প্রাকৃতিক কৌশলগুলো অনুসরণ করাই ভালো।