অন্ধকার যুগের সাহিত্য (১২০১-১৩৫০ খ্রী)
1. প্রাকৃত ভাষার গীতি কবিতার সংকলিত গ্রন্থ ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’
2. রামাই পন্ডিত রচিত ধর্মপুজার শাস্ত্রগ্রন্থ শূন্যপুরাণ। এটি গদ্য পদ্য মিশ্রিত চম্পু কাব্য।
3. সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেনের সভাকবি হলায়ুদ মিশ্র রচিত ‘সেক শুভোদয়া’ সংস্কৃত গদ্য পদ্য লেখা চম্পু কাব্য।
(বাংলা সাহিত্যের ১২০০-১৩৫০ খ্রি. পর্যন্ত সময়কে “অন্ধকার যুগ” বা “বন্ধ্যা যুগ” বলে কেউ কেউ মনে করেন। ড. হুমায়ুন আজাদ তাঁর “লাল নীল দীপাবলী” গ্রন্থে (পৃ. ১৭) লিখেছেন- “১২০০ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রচিত কোন সাহিত্য কর্মের পরিচয় পাওয়া যায়না বলে এ-সময়টাকে বলা হয় ‘অন্ধকার যুগ’। পণ্ডিতেরা এ-সময়টাকে নিয়ে অনেক ভেবেছেন, অনেক আলোচনা করেছেন, কিন্তু কেউ অন্ধকার সরিয়ে ফেলতে পারেন নি।এ- সময়টির দিকে তাকালে তাই চোখে কোন আলো আসেনা, কেবল আঁধার ঢাকা চারদিক।” কিন্তু, ওয়াকিল আহমেদ তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যের পুরাবৃত্ত’ (পৃ. ১০৫)-এ লিখেছেন- “বাংলা সাতিহ্যের কথিত ‘অন্ধকার যুগ’ মোটেই সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্বের যুগ ছিল না। ধর্ম -শিক্ষা শিল্প চর্চার দায়িত্ব যাদের উপর ন্যস্ত ছিল, তারা সীমিত আকারে হলেও শিক্ষা সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে, কি হিন্দু কি মুসলমান কেউ লোকভাষা বাংলাকে গ্রহণ করেননি। বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন না থাকার এটাই মূখ্য কারণ।”)
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য
1. মধ্যযুগের প্রথম কাব্যগ্রন্থ হল ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য’। কাব্যটির বিষয়বস্তু হলো রাধা এবং কৃষ্ণের প্রেমলীলা।
2. কাব্যটির রচয়িতা বড়ু চন্ডীদাস। তার প্রকৃত নাম ছিল অনন্ত।
3. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রী বসন্তরÄন রায় বিদ্বদ্বল্লভ পশ্চিমবঙ্গের বাকুড়া জেলার বনবিষ্ণুপুরের কাকিল্যা গ্রামের এক গৃহস্থ বাড়ির গোয়ালঘরের টিনের চালার নিচ থেকে কাব্যটি উদ্ধার করেন।
4. সম্পাদনের পর ১৯১৬ সালে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য’ নামে এটি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশ করেন।
5. সমস্ত কাব্যে মোট তিনটি চরিত্র আছে- রাধা, কৃষ্ণ এবং বড়ায়ি।
6. যদিও কারও কারও মতে মূল গ্রন্থটির নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ।
7. কৃষ্ণের জন্ম, বৃন্দাবনে রাধার সঙ্গে তাঁর প্রণয় এবং অন্তে বৃন্দাবন ও রাধা উভয়কে ত্যাগ করে কৃষ্ণের চিরতরে মথুরায় অভিপ্রয়াণ – এই হল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মূল উপজীব্য। আখ্যানভাগ মোট ১৩ টি খণ্ডে বিভক্ত।
8. চর্যাপদের পর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা ভাষার দ্বিতীয় প্রাচীনতম আবিষ্কৃত নিদর্শন।
9. প্রথম বাংলায় রচিত কৃষ্ণকথা বিষয়ক কাব্য।
মঙ্গল কাব্য
1. মঙ্গল কাব্য পনের শতকের শেষভাগ থেকে আঠার শতকের শেষার্ধে রচিত হয়েছিল।
2. যেকোন মঙ্গল কাব্যের ৫টি অংশ থাকবে। যথা- ১. বন্দনা ২. আত্নপরিচয় I গ্রন্থ উrপত্তির কারণ ৩. দেবখন্ড ৪. মর্তখন্ড ৫. ফলশ্রুতি।
3. মঙ্গল কাব্যের উল্লেখযোগ্য শাখা এবং ধারাগুলো হলো- মনসামঙ্গল কাব্য, চন্ডীমঙ্গল কাব্য, অন্নদামঙ্গল কাব্য, ধর্মমঙ্গল কাব্য এবং কালিকামঙ্গল কাব্য।
মনসামঙ্গল কাব্য
1. সাপের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ‘মনসা দেবীর’ কাহিনী নিয়ে রচিত হয় মনসামঙ্গল কাব্য।
2. মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি কানা হরিদত্ত। মনসামঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি হলেন বিজয় গুপ্ত।
3. মনসামঙ্গল কাব্যের উল্লেখযোগ্য চরিত্র হলো- চাদ সIদাগর, বেহুল এবং লখিন্দর।
চন্ডীমঙ্গল কাব্য
1. চন্ডী দেবীর কাহিনী অবলম্বনে রচিত হয় চন্ডীমঙ্গল কাব্য।
2. চন্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি কবি হলেন মানিক দত্ত এবং শ্রেষ্ঠ কবি হলেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।
3. চন্ডমঙ্গল কাব্যের উল্লেখযোগ্য চরিত্র গুলো হল- কালকেতু, ফুল্লরা, ধনপতি, খুল্লনা, ভাড়ু দত্ত এবং মুবারিশীল।
অন্নদামঙ্গল কাব্য
1. দেবী অন্নদার গুণকীর্তন রয়েছে অন্নদামঙ্গল কাব্যে।
2. অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রধান কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর। তিনি মধ্যযুগের সর্বশেষ কবি। ভারতচন্দ্রের মাধ্যমেই মধ্যযুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। তিনি নবদ্বীপের মহাারা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি ছিলেন।
3. অন্নদামঙ্গল কাব্যের উল্লেখযোগ্য চরিত্র গুলো হল- মানসিংহ, ভবানন্দ, বিদ্যা, সুন্দর এবং মালিনী।
ধর্মমঙ্গল কাব্য
1. ডোম সমাজের দেবতা ধর্মঠাকুরের মাহাত্ন্য প্রচারের জন্য ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্য ধারার সূত্রপাত হয়েছে।
2. ধর্মমঙ্গল কাব্যের আদি কবি ময়ূরভট্ট।
কালিকামঙ্গল কাব্য
1. অপূর্ব রূপ গুণান্বিত রাজকুমার সুন্দর এবং বীরসিংহের অতুলনীয়া সুন্দরী কন্যা বিদ্যার গুপ্ত প্রণয়কাহিনী কালিকামঙ্গল কাব্যের মূল উপজীব্য বিষয়।
2. কালিকামঙ্গল কাব্যের আদি কবি হলেন কবি কঙ্কন।