শিশুদের জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নাই। কিন্তু ইদানিং কালে মায়ের দুধের পরিবর্তে বিকল্প খাদ্য বা কৌটার দুধের প্রচলন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই বিকল্প খাদ্যগুলো শিশুর জন্য ক্ষতিকর। তাই সম্প্রতি আইন করে টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য মাধ্যমে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প খাদ্যেগুলোর বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন অমান্যকারীদের পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা ও তিন বছরের কারাদনণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিকল্প খাদ্য বা কৌটার দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর জন্য আইন আরো কড়া। গর্ভবতী মহিলা, মাতৃদুগ্ধদানকারী মা বা শিশুর মায়েদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা, কোন রকম প্রলোভন মূলক প্রস্তাব করা, ডিসকাউন্ট বা মুল্যহ্রাস, বিনামূল্যে স্যাম্পল বা নমুনা প্রদান, আর্থিক বা অন্য কোন সুবিধা প্রদানসহ কোম্পানীগুলোর অনেক পদক্ষেপের উপরই কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে।
শিশুদের স্বাস্থ্য ও সুস্থ বিকাশের জন্য মায়ের দুধ কতটা উপকারী তা অনুধাবন করার জন্য এই কঠোর আইনটিই যথেষ্ট। আর তা জরুরী এবং অপরিহার্য বলেই এ দেশের চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য গবেষক ও সমাজকর্মীদের পরামর্শে এমন সাহসী ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে।
এরপরও টিনজাত ও কৌটাজাত খাদ্য শিশুদেরকে গছিয়ে দেয়ার জন্য নানান পথ বেছে নেয়া হয়। কোন কোন টিকাদান কেন্দ্র বা মা ও শিশু সেবাকেন্দ্রগুলোতে গোপনে বা প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে কিংবা মুখের মিষ্টি ভাষায় সহজ-সরল মাদেরকে প্রলুব্ধ করা হয়। উপরের স্তরেও অনেক সময় নানান ধরনের উপঢৌকন ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে এসব খাদ্যের পসার ঘটাতে সচেষ্ট থাকতে দেখা যায়। তারপরও ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসা সহকারি, সেবাপ্রদানকারি ব্যক্তি ও সংস্থাগুলোর নিরন্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিস্থিতির আশাব্যাঞ্জক উন্নতি হয়েছে।
তবে বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলোতে কিছু কিছু শিশু খাদ্যের বিজ্ঞাপনে এমন সব কথা বলা হয় যা সত্যের বরখেলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। এ সব বিজ্ঞাপন প্রতিনিয়তই শিশুদের বাবা-মা ও অভিবাবকরা দেখে থাকেন। এসব বিজ্ঞাপনে অতিরঞ্জন করে বলা হয়, গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে অমুক টিনজাত খাদ্য খাবার পর শিশুর মেধা বেড়ে গেছে। কিংবা শিশু উঁচা-লম্বা হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে এসব তথ্যের কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা প্রতিষ্ঠিত দালিলিক প্রমাণ নাই। আমাদের ঘরের সতেজ টাটকা মনোহরী খাবারের চেয়ে কোন অবস্থাতেই এসব খাবারের প্রাধান্য নাই। মায়েরা এমন বিজ্ঞাপনে প্রতারিত হন। এসব খাবার খাওয়াবেন কিনা ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। বিজ্ঞাপনের শক্তি এতোই যে, ডাক্তাররা না বললে মায়েরা মুখ গোমড়া করে থাকেন। ডাক্তার কেন হ্যাঁ বললেন না।
আন্তর্জাতিকভাবে সর্বজন স্বীকৃত তথ্য হলো, টিনজাত বা কৌটাজাত খাবার শিশুর জন্য মোটেও উপযোগী নয়। বরং অপকারিও বটে। এসব খাবার গ্রহণের ফলে শিশুদের ঘন ঘন ডায়রিয়া, কাশি, সর্দি, নিওমোনিয়া, কোষ্টকাঠিন্য, ওজন কমে যাওয়া, এলার্জি জনিত রোগ, এজমা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মৃত্যঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, শিশুর মেধা বিকাশ বিঘ্নিত হওয়া, মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া সহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর আর্থিক অপচয়ের কথা বিবেচনা করলে তো রীতিমত আঁতকে উঠার কথা।
শিশুরা জাতির ভবিষ্যত। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিশুদের কথা সর্বাগ্রে ভাবা প্রয়োজন। তাই মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন এর যথাযথ প্রয়োগ ও কার্যকারিতার দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি শিশুদের মায়ের দুধ পান নিশ্চিত করতে হবে।