শিশুর জন্মের সাথে সাথেই পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে। আত্মীয় স্বজন সবাই নতুন শিশুকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। আর তার সাথে সাথে বিভিন্ন রোগ জীবাণুর আক্রমনের শঙ্কায় বাবা মায়ের চিন্তা বাড়ে। সবার একটাই কামনা, শিশুটি যেন সুস্থ থাকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ কে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
এক. যেসব রোগ বিভিন্ন জীবাণু দিয়ে হয়। এসব রোগ ঐ নির্দিষ্ট জীবাণু থেকে বেঁচে থাকতে পারলে প্রতিরোধ করা যায়। যেমন- ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিওমায়েলাইটিস, নিউমোনিয়া ইত্যাদি।
দুই. যেসব রোগ সংক্রামক জীবাণু দিয়ে হয় না। এসব রোগ অনেক সময় বংশগত, আবার অনেক সময় ব্যক্তিগত অভ্যাস, স্বল্প পরিশ্রম ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয়।
শিশুদের যেসব রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব সেগুলোকে প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞানীরা অনেক বছর আগে থেকেই কাজ করে আসছেন। তারা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন যেন রোগ হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। আর এ জন্যই আমরা সুস্থ্য শিশুদের টিকা দিয়ে থাকি। টিকার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিশুকে ঐ রোগ গুলো থেকে দূরে রাখা।
কি কি রোগের বিরুদ্ধে টিকা দেয়া হয়:
যে সকল রোগের বিরুদ্ধে আমাদের দেশে সরকারী ভাবে টিকা দেয়া হয় সে রোগ গুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০টি রোগ প্রতিরোধে বাচ্চাদের বিনামূল্যে টিকা দেয়া হচ্ছে। রোগগুলো হচ্ছে- যক্ষা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, টিটেনাস, হেপাটাইটিস-বি, হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা – বি, নিউমোনিয়া, পোলিওমায়েলাইটিস, হাম ও রুবেলা।
কখন দিতে হবে ?
মনে রাখতে হবে, বাচ্চাকে সবগুলো টিকা দিতে হলে কমপক্ষে ৬ বার টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
প্রথমত, যে টিকা টি বাচ্চার জন্মের সাথে সাথেই দেয়া হয় তা হচ্ছে বিসিজি। এটি যক্ষা রোগের বিরুদ্ধে দেয়া হয়। বাচ্চার বাম হাতে চামড়ার ভিতরে এই টিকা দেয়া হয়। মনে রাখবেন, এই টিকা দিলে টিকার স্থানে সামান্য ঘা হয়ে পেকে যাবে। আর এই ঘা না হলে ধরে নিতে হবে, টিকা কার্যকর হয়নি। সেক্ষেত্রে এই টিকা বাচ্চাকে আবার দিতে হবে। টিকার দেয়ার পরে শিশুর সামান্য জ্বর আসতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। জ্বর ১০১ডিগ্রী এর বেশি হলে স্বাস্থ্যকর্মী অথবা ডাক্তারকে ফোন দিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করুন।
বাচ্চার বয়স ৪২ দিন হলেই তাকে ২য় ডোজ টিকা দেয়ার জন্য টিকা কেন্দ্রে নিয়ে আসুন। ৪২ দিন বয়সে বাচ্চাকে ২ ফোঁটা পোলিও টিকা মুখে খাওয়ানো হয়। এর সাথে সাথে ডান পায়ে নিউমোনিয়ার টিকা দেয়া হয়। আর বাম পায়ে দেয়া হয় আর একটি টিকা।আসলে, বাম পায়ের টিকা টি একটি ইঞ্জেকশন হলেও এটি পাঁচটি রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।রোগ গুলো হচ্ছে- ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা- বি।
২য় ডোজ দেয়ার ২৮ দিন পর বাচ্চাকে ৩য় ডোজ টিকা দিতে হবে। ৩য় ডোজ টিকায় আসলে ২য় ডোজের টিকাগুলোই আবার দেয়া হয় রোগের বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধ তৈরী করার জন্য।
৪র্থ ডোজ টিকা ৩য় ডোজ টিকা দেয়ার ২৮ দিন পর দিতে হবে। এক্ষেত্রেও ২য় ডোজের সেই টিকাগুলোর পাশাপাশি আইপিভি নামক একটি ভ্যাক্সিন দেয়া হয় পোলিও রোগের বিরুদ্ধে স্থায়ী প্রতিরোধ তৈরী করার জন্য।
৫ম ডোজ টিকা ৪র্থ ডোজের ২৮ দিন পর দেয়া হয়। এ সময়ে আসলে নিউমোনিয়ার জন্যে বাচ্চাক পিসিভি নামক একটি ইঞ্জেকশন দেয়া হয়।
৬ষ্ঠ ডোজটি ৫ম ডোজের অনেক পরে অর্থাৎ শিশুর বয়স যখন ৯ মাস তখন দেয়া হয়। এই সময়ে বাচ্চাকে হাম এবং রুবেলা রোগের বিরুদ্ধে একটি ইঞ্জেকশন দেয়া হয়। অনেকদিন পরে দেয়া হয় বলে অধিকাংশ মা এই টিকা টি তার বাচ্চাকে দিতে ভুলে যান। অথচ এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে মনে রাখা উচিত।
কোথায় দিবেন?
বাংলাদেশের সর্বত্র টিকাদান কার্যক্রম চলছে সরকারীভাবেই। আপনার নিকটস্থ সদর হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল,কমিউনিটি ক্লিনিক অথবা ক্ষেত্র বিশেষ কোন কোন প্রইভেট ক্লিনিকে খোঁজ নিলেই জেনে নিতে পারবেন কখন কখন সেখানে টিকা দেয়া হয়। টিকাদান কর্মসূচী সম্বলিত সাইনবোর্ড এ টিকাদান কর্মীর নাম, মোবাইল নাম্বার ও টিকাদানের তারিখ লেখা থাকে।