শীতের হিমেল হাওয়ায় কমবেশি সবারই ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। অনেকের ত্বক ফেটে যায়। যাদের ত্বক এমনিতেই একটু শুষ্ক ও রূক্ষ প্রকৃতির, এ সময়টাতে তাদের সমস্যা একটু বেশিই হয় । শুষ্ক ত্বকের জন্য তাই শীতের সময়ে একটু বাড়তি যত্ন দরকার।
শীতে কারও কারও ত্বক অতিরিক্ত ফেটে যায়। অতিরিক্ত ত্বক ফাটার সমস্যাটি জন্মগত কারনে হতে পারে। আবার কিছু রোগের জন্যও এমন হতে পারে। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পরও অতিরিক্ত ত্বক ফাটলে বুঝতে হবে অন্য কোন সমস্যার কারণে এমন হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারন:
১) আমাদের দেশে শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। এমন আবহাওয়ার কারনে ত্বকও শুষ্ক হয়ে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়া, স্বল্প আর্দ্রতা, অধিক সূর্যের আলো ও শুষ্ক আবহাওয়া ত্বক শুষ্ক হওয়ার প্রধান কারন।
২) বংশগত বা জিনগত কারনে অনেকের ত্বকে তেল গ্রন্থিগুলো প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকতে পারে। এ কারনে তাদের পর্যাপ্ত তেল নিঃসৃত হয় না। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
৩) বয়স ৪০ পেরুলে তেল ও ঘাম গ্রন্থির সংখ্যা কমে যায়। এ কারনে ত্বক শুষ্ক হওয়ার হার বেড়ে যায়।
৪) ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তেল গ্রন্থিগুলো সঠিকভাবে গঠিত থাকেনা। ফলে তাদের ত্বকও শুষ্ক হতে পারে।
৫) যাদের ত্বকের গঠন পাতলা তাদের ত্বক শুষ্ক হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
৬) পেশাগত কারণে অনেকের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। যারা বাগানে, কৃষিক্ষেত্র বা কনস্ট্রাকশনের কাজ করেন তাদের ত্বকও শুষ্ক হয়ে যায়।
৭) ক্লোরিনযুক্ত পানিতে অতিরিক্ত সাঁতার কাটলে বা গোসল করলে এবং গরম পানি বা ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।
৮) বারবার ক্যামিকেল জাতীয় পদার্থের সংস্পর্শে এলে, ধূমপান করলে, এলকোহল ও ক্যাফেইন গ্রহণ করলে এবং অতিরিক্ত আকাশপথে ভ্রমণ করলে ত্বক শুষ্ক হওয়ার হার বাড়ে।
৯) ভিটামিন-এ ও বি এর অভাব হলে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।
১০) জিংক ও ফ্যাটি এসিডের অভাব হলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
১১) পানিশূন্যতা হলে ত্ক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে। যেমন: ডায়রিয়া, অতিমাত্রায় জ্বর ও অতিরিক্ত ঘামের কারনে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে। এমনকি প্রতিদিন প্রয়োজনমত পানি পান না করাও ত্বকের শুষ্কতার কারন।
১২) কিছু চর্ম রোগ (যেমন: একজিমা, ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস)-এর কারনে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
১৩) কিছু ওষুধ গ্রহণে এবং এসি রুমে অতিরিক্ত অবস্থান করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে।
১৪) থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা থাকলে, ডায়াবেটিস থাকলে এবং অতিরিক্ত পারফিউম ব্যবহার করলেও ত্বক শুষ্ক হতে পারে।
প্রতিকার:
১) ত্বক শুষ্ক হবার প্রকৃত কারন খুঁজে বের করুন এবং তা পরিহার করার চেষ্টা করুন।
২) ত্বক যাতে শুষ্ক না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৩) ভালো মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার লাগানোর আগে মুখের মরা কোষ পরিষ্কার করে নিন।
৪) দীর্ঘক্ষণ ধরে গোসল করবেন না।
৫) গরম পানিতে গোসল করা পরিহার করুন।
৬) ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন।
৭) প্রচুর পানি পান করুন।
৮) নরম, সুতি ও আরামদায়ক কাপড় পরার চেষ্টা করবেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে শুষ্ক ত্বকের যত্ন:
– গোসলের কয়েক মিনিট আগে সারা শরীরে অলিভ অয়েল মেখে গোসল করুন।
– অলিভ অয়েল ১ চামচ + ৫ চামচ লবণ + ১ চামচ লেবুর রস দিয়ে তৈরী স্ক্রাব মুখে ও সারা শরীরে লাগাতে পারেন। এতে মরে যাওয়া কোষ দূর হবে।
– শুষ্ক জায়গায় মধু ম্যাসেজ করে ২-৩ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
– আক্রান্ত জায়গায় নারকেল তেল লাগালে উপকার পাবেন।
– এলোভেরা জেল মধুর সাথে মিশিয়ে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
– প্রচুর শাকসবজি খান, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খান এবং নিয়মিত ত্বকের পরিচর্চা করুন।