মলদ্বারে চুলকানি খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। প্রাচীনকালের চিকিৎসা সংক্রান্ত বই-পুস্তকেও এই সমস্যাটি সম্পর্কে লেখা পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, মলদ্বার বা পায়ুপথে স্নায়ুতন্ত্রের প্রাচুর্যের কারণে এই সমস্যাটি তীব্র আকারে অনুভূত হয়। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে এটি অত্যন্ত চরম অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর হয়ে ওঠে। তবে মলদ্বারে চুলকানি কোন রোগ নয়। বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসাবে এটি প্রকাশ পায়। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর চিকিৎসা করা সম্ভব।
চুলকানির কারণ:
সাধারণত মলদ্বার ও এর আশপাশে চুলকানি হয়ে থাকে। নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুলকানির প্রকৃত কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। মলদ্বারে চুলকানির প্রধাণ কারনগুলো হচ্ছে-
১. অপরিচ্ছন্ন থাকা কিংবা অতিরিক্ত মলদ্বার পরিষ্কার দুটোই মলদ্বারে চুলকানির কারণ হতে পারে।
২. কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুগন্ধি সাবান, রঙিন-সুগন্ধি ও খসখসে টয়লেট পেপার ব্যবহারও পায়ুপথে চুলকানির কারণ হতে পারে।
৩. যারা অতিরিক্ত ঘামান তাদের এই ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৪. ছোটদের ক্ষেত্রে কৃমি চুলকানির প্রধান কারণ। সাধারণত রাতের বেলা ঘুমের সময় শিশুদের মলদ্বার চুলকায়।
৫. বড়দেরও কৃমির কারণে চুলকানি হতে পারে।
৬. অনেক সময় মলদ্বার বা এর আশেপশে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে চুলকানি হয়। সাধারণত মহিলারা তুলনামূলক বেশি ছত্রাকের আক্রমণের শিকার হন।
৭. যৌনবাহিত রোগও মলদ্বারে চুলকানির কারণ হতে পারে।
৮. যে সমস্ত চর্ম রোগে শরীরে চুলকানি হয় (যেমন-অ্যালার্জি) সবগুলোই মলদ্বারে চুলকানি করতে পারে। বিশেষ করে সোরিয়াসিস এবং কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস চুলকানির অন্যতম কারন।
৯. কফি, চকলেট, বিয়ার, বাদাম, টমেটো, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার এবং মসলাদার খাবার থেকেও চুলকানি হয়।
১০. অনেক সময় ওষুধের কারনে মলদ্বারে চুলকানি হয়। ওষুধের মধ্যে লেক্সেটিভ ও অ্যান্টিবায়োটিক মলদ্বারে চুলকানির কারণ হতে পারে।
১১. সার্জিকাল রোগগুলোর মধ্যে সাধারণত এনাল ফিশার, পাইলস ও ফিস্টুলা মলদ্বারে চুলকানি করে থাকে।
১২. আইবিএস, ডায়রিয়া এবং মল ধরে রাখার অক্ষমতাজনিত কারণেও চুলকানি হয়।
১৩. খুব অল্প ক্ষেত্রে হলেও মলদ্বারের ক্যান্সার চুলকানির কারণ।
১৪. ডায়বেটিস কখনও কখনও চুলকানির কারণ হতে পারে।
প্রতিকার:
সাধারণত চুলকানির সঙ্গে মলদ্বারে ভেজা ভেজা ভাব ও জ্বালাপোড়া হতে পারে। এমনকি মলদ্বার লাল হয়ে যেতে পারে। অধিকাংশ চুলকানির জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সাধারণত ঘরে বসে কিছু নিয়ম মেনে চললেই চুলকানি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। যেমন-
১. অ্যালার্জি হয় এমন খাবার এড়িয়ে চলা।
২. মলত্যাগ ও অতিরিক্ত ঘামের পর মলদ্বার ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখা।
৩. সুতি কাপড়ের ঢিলাঢালা অন্তর্বাস ব্যবহার করা।
৪. রঙিন, সুগন্ধিযুক্ত ও খসখসে টয়লেট পেপার ব্যবহার না করা।
৫. সুগন্ধি সাবান ব্যবহার না করা।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত:
তবে মলদ্বারে চুলকানি হলেই তা অবহেলা করা উচিত নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন এমন উপসর্গগুলো হল-
১. চুলকানির তীব্রতা বেশি হলে ও সবসময় চুলকানি থাকলে।
২. যদি চুলকানির সঙ্গে রক্ত যায়।
৩. চুলকানি থেকে সংক্রমণ (ইনফেকশন) ঘটলে।
৪. মলদ্বারে চাকা থাকলে।
এসব উপসর্গ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চুলকানির কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের যথাযথ পরামর্শ এবং নিজের যত্ন নিয়ে বেশিরভাগ রোগী মলদ্বারের চুলকানি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে পারেন।