সন্তান জন্ম নিয়ে আমাদের দেশে নানা ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত আছে। গ্রামে এখনো উঠতি বয়সের মেয়েদের জমজ কলা খেতে দেয়া হয় না। কারন ধারণা করা হয় জমজ কলা খেলে নাকি জমজ বাচ্চা হয়। গ্রামের দিকে আরো একটা প্রচলন আছে। সেটা হচ্ছে সূর্যগ্রহনের দিন বিবাহিত অথবা গর্ভবতী মহিলাদের কাটাকাটি করতে নিষেধ করা হয়। কারন অনেকে মনে করেন এ সময় তরকারী কাটাকাটি করলে ঠোঁট কাটা (ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে Cleft Lip) বাচ্চা জন্ম নেয়।
জমজ বাচ্চা নিয়ে এক সময় নারীদের মধ্যে কুসংস্কার ও ভয় কাজ করলেও এখন তা অনেকাংশেই কমে গেছে। বরং সাম্প্রতিক সময়ের স্মার্ট মেয়েরা ঝামেলা কমানোর জন্য জমজ বাচ্চা বা টুইন বেবি (Twin Baby) নেয়ার দিকে ঝুঁকছে। অনেক মেয়েই মনে প্রাণে চায় যেন তাদের টুইন বেবি হয়। অথচ তাদের অনেকেই হয়তো জানে না- টুইন বেবি নেয়া ও প্রসব পরবর্তী সময় তা সামলানো কত কষ্ট। টুইন বেবির মায়েদের গর্ভকালীন সময়েও নানা ধরনের জটিলতা পোহাতে হয়। যেমন- হাইপারএমেসিস থেকে শুরু করে পিইটি (PET), এক্লাম্পশিয়া (Eclampsia), প্রিটার্ম লেবার (Preterm Labor) ইত্যাদি। এমন কি প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ (Postpartum Hemorrhage)-এর সম্ভাবনাও বেড়ে যায় অনেক গুণ।
টুইন বেবি কিভাবে হয়:
সাধারণত প্রতি মাসে মেয়েদের একটা করে ডিম্বাণু (Ovum) ম্যাচুর হয় এবং তা একটি মাত্র শুক্রাণু (Sperm) দ্বারা নিষিক্ত হতে পারে। যদি কোনো মাসে ২টা ওভাম আসে এবং তা ২টা আলাদা শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয় তবে তাতে টুইন বেবি হবে। কিন্তু তারা দেখতে এক রকম হবে না। কারন এখানে আলাদা শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ছিল। কিন্তু একটি ডিম্বাণু ও শুক্রানু জাইগোট হওয়ার পরে “টটিপোটেন্ট সেল” থাকা অবস্থায় যদি তারা বিভক্ত হয়ে ২ভাগ হয়ে যায় তাহলে প্রতি কোষ থেকে একটা করে বাচ্চা হয়। অর্থাৎ মোট দুইটি বাচ্চা হয়। এক্ষেত্রে দুইটা বাচ্চার চেহারা, লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ সব কিছু এক হয়।
সারা দুনিয়াতে টুইন নিয়ে অনেক গল্প আছে। তবে সত্যি কথা হলো- টুইন বেবী হওয়া অ্যাক্সিডেন্ট এবং অপ্রত্যাশিত। অনেকটা গাড়ি ব্রেক ফেইল করে স্বর্ণ কুপে পড়ার মতো। এবার আসেন জেনে নেই কিভাবে পরিকল্পণামাফিক টুইন বেবি বানানো যায়, কৃত্রিমভাবে। বলা হয়ে থাকে, একটা মেয়ের সারা জীবনে ৫০০ বার ওভুলেশন হয়। কিন্তু সাক্সেসিভ গুলি লাগে না। মিসফিল্ডিং হয় বেশির ভাগ। তাই নিশানা ঠিক ও ডাবল করার জন্য ওভুলেশন ইনডিউসিং ড্রাগ খেলে দুই পাশ থেকে ২টি ডিম্বাণু আসতে পারে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে ডাইজাইগোটিক (Di-zygotic) হবে। অর্থাৎ ভিন্ন চেহারার বাচ্চা হবে। এছাড়াও IVF পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে যে যাই বলেন, এটা পুরাই ন্যাচারাল থিওরি বা প্রাকৃতিক ব্যাপার। আপনি যা চাইবেন তা হওয়ার সম্ভাবনা কম। আবার এমনও হতে পারে না চাইতেই হয়ে গেল টুইন বেবি।