কথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা কেউ বুঝে না। আসলেই দাঁতের বেলায় আমরা সবাই অবহেলা করে থাকি। একটু অযত্ন-অবহেলার কারনে পরে বেশ ভুগতে হয়। দাঁতের যন্ত্রণায় কষ্ট পাননি এমন কাউকে এসময় খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। অথচ সহজ কিছু টিপস মেনে চললেই দাঁত থাকবে সুস্থ ও মজবুত। চলুন দাঁতের যত্নে সাধারণ কিছু টিপস জেনে নেই-
১. প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশ না করে ঘুমানো যাবে না। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের অনেক জটিল সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
২. ব্রাশ করার সময় টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে উপরের দাঁত উপর থেকে নিচে এবং নিচের দাঁত নিচ থেকে উপরের দিকে মাজতে হবে। পাশাপাশি দাঁতের ভেতরের দিকেও মাজা জরুরি। যেসব জায়গা ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করা সম্ভব নয় সেসব জায়গায় ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে।
৩. ফ্লুরাইড সমৃদ্ধ যেকোন টুথপেস্ট দাঁতের জন্য উপকারী। দীর্ঘদিন যাবত একই টুথপেস্ট ও ব্রাশ ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ বিভিন্ন পেস্টে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে। প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর টুথপেস্টের ব্রান্ড এবং টুথব্রাশ পরিবর্তন করা ভালো।
৪. দাঁতের সুস্থতায় কয়লা, গুল, ছাই, মাটি, গাছের ডাল ইত্যাদি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। এগুলো দাঁতের লালচে ভাব ও দাগের জন্য দায়ী। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে পান-সুপারি, চা, কফি, তামাক প্রভৃতি পান করার কারনেও দাঁতে দাগ জমতে পারে। এসব দাগ সাধারণ ব্রাশিং এর মাধ্যমে দূর করা সম্ভব নয়। স্কেলিং এবং পলিশিং এর মাধ্যমে এই দাগ দূর করতে হবে।
৫. ঠান্ডা পানি লাগলে অনেকেরই দাঁত শির শির করে। তার উপর ঠিকমত ব্রাশ না করলে দাঁতে জিঞ্জিভাইটিস দেখা দিতে পারে। তখন দাঁতের শির শির ভাব আরো বেড়ে যায়। দাঁতে শির শির ভাব কমানোর জন্য ডেন্টাল সার্জনরা সাধারণত বিশেষ ধরনের মেডিকেটেড টুথপেস্ট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এসব টুথপেস্টের বিশেষ উপাদান দাঁতে শির শির করা দূর করে থাকে। কারো দাঁতে এ ধরনের সমস্যা থাকলে মেডিকেটেড টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।
৬. তবে দাঁতে শির শির ভাব দূর হওয়ার পরে মেডিকেটেড টুথপেস্ট ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারন এসব মেডিকেটেড টুথপেস্ট এক নাগাড়ে ব্যবহার করলে দাঁতের স্বাভাবিক চকচকে ভাব (গ্লেজ) কমে যেতে পারে। তাই নিয়ম হচ্ছে, দাঁত শির শির ভাল হয়ে যাওয়ার পর আবারো স্বাভাবিক টুথপেস্টে ফিরে যাওয়া।
৭. যেকোন খাবার খাওয়ার পর পরই ভালোভাবে কুলি করে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। মুখে দুর্গন্ধ ও ব্যাকটেরিয়া ঠেকাতে টাংস্ক্র্যাপার দিয়ে জিভ পরিষ্কার রাখাটাও খুব জরুরি। মাঝেমধ্যে অ্যালকোহল মুক্ত মাউথওয়াশ দিয়ে কুলি করা প্রয়োজন। এতে মুখগহ্বর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত থাকে।
৮. দীর্ঘ সময় ধরে দাঁতের গায় খাদ্য কনা জমে থাকলে তা থেকে ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতে ক্ষয় হয়ে থাকে। দাঁতে কালো দাগ দেখলে বা গর্ত হলে মোটেও দেরি করবেন না বা ব্যথা হওয়ার জন্য বসে থাকবেন না। এ অবস্থায় ফিলিং করে দাঁতকে রক্ষা করা যাবে কিন্তু ব্যথা শুরু হলে রুট ক্যনেল ট্রিটমেন্ট ও ক্রাউন করতে হবে যা অনেক ব্যবহুল ও সময় সাপেক্ষ।
৯. দাঁতের জন্য যেকোন সার্জিক্যাল চিকিৎসায় যাওয়ার পূর্বে বর্তমানে রোগী যেসব ওষুধ খাচ্ছেন তা ডাক্তারকে জানাতে হবে। এছাড়া রোগীর রক্তপাত বন্ধ না হওয়া সম্পর্কিত কোন খারাপ অভিজ্ঞতা আছে কিনা তাও জানাতে হবে। সার্জারি সফল হওয়ার জন্য এগুলো জানা দরকার।
১০. সুস্থ্য থাকতে বছরে অন্তত দু-বার ডেন্টাল চেক-আপ করানো দরকার। এই কথাটাকেই কেউ কেউ ভুল করে বলেন, বছরে নাকি দুই বার স্কেলিং করাতে হয়। এটা ঠিক নয়। মুখে কোন সমস্যা না থাকলে স্কেলিং করানোর কোন প্রয়োজন নাই।