হাল আমলে রোগ নির্ণয়ের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি খুবই জনপ্রিয় ডাক্তারি পরীক্ষা। এটা চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের জন্যই বেশ স্বস্তিদায়ক। তবে এই পরীক্ষার জন্য রোগীর কিছু প্রস্তুতির দরকার হয়। এই প্রস্তুতিমূলক জ্ঞান না থাকার কারনে রোগী ও ডাক্তার উভয়কেই বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়, অসুবিধায় পড়তে হয়।
জেনে রাখা উচিত, আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার জন্য ঠিকমত প্রস্তুতি গ্রহণ না করলে চিকিৎসকের পক্ষে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি রোগীরও অযথা সময় নষ্ট হয়।
খুবই প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, আল্ট্রাসনোগ্রাফি মানেই বেশি করে পানি পান করে প্রস্রাবের অধিক চাপ তৈরি করে আসা। আবার অনেক সময় দেখা যায়, রোগীকে শুধু পানি খেয়ে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু রোগী পানির বদলে শরবত বা জুস এবং অনেক সময় হালকা বা ভারী নাশতা করে এসেছে। এতে চিকিৎসকের পক্ষে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় যে, রোগীকে খালি পেটে থাকতে বলা হলেও রোগী সামান্য পরিমাণে কিছু না কিছু খাবার খেয়ে আসে যেটা আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার জন্য অন্যতম বাধা।
সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফির আগে রোগীর যথাযথ প্রস্তুতি থাকা দরকার। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবেন!
আল্ট্রাসনোগ্রাফির প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন?
১. সাধারন সম্পূর্ন পেটের স্ক্যানিং করতে হলে রোগীকে ৬-৮ ঘণ্টা খালি পেটে থাকতে হবে এবং পরীক্ষার দুই ঘণ্টা পূর্বে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, অতিরিক্ত পরিমাণ পানি পান করা যাবেনা। কারন এতে রোগীর প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখতে কষ্ট হবে। এতে মনিটরে সঠিক ছবি আসবেনা এবং চিকিৎসকের পক্ষে রোগ নির্ণয় করা কষ্টকর হবে।
২. প্রস্রাবের চাপের জন্য রোগীকে শুধু পানিই পান করতে হবে। অন্যকিছু যেমন শরবত, জুস, সফট ড্রিংকস পান করা যাবেনা। কারণ এসব পানীয় পান করলে পাকস্থলি ও খাদ্যনালীতে গ্যাস তৈরি করবে যা আল্ট্রাসনোগ্রাফির জন্য অসুবিধা তৈরী করে।
৩. খালি পেটে থাকা বলতে অনেকেই ধারণা করে নেয় যে হালকা নাশতা করা যাবে। কিন্তু খালি পেট থাকতে বললে কোনভাবেই কিছু খাওয়া যাবে না। কারণ সামান্য পরিমাণ কিছু খেলেও তা পেটে গ্যাস তৈরি করবে। গ্যাস তৈরি করে এমন যেকোন কিছু আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার জন্য বাধাস্বরূপ।
৪. পেটের উপরিভাগের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি:
সাধারণত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা খালি পেটে থাকতে হবে। এছাড়াও যেহেতু পেটের উপরিভাগে পিত্তথলি থাকে সেজন্য পরীক্ষার পূর্বের দিন থেকে কোন ধরনের তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যাবেনা। কেননা খাবারের সাথে পিত্তথলির সংকোচন-সম্প্রসারণ নির্ভর করে। চর্বি জাতীয় খাবার খেলে বা ভরা পেট থাকলে পিত্তথলি অধিক পরিমাণে সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে পিত্তথলিকে অনেক ছোট দেখা যায়। এমনকি অনেক সময় নাও দেখা যেতে পারে। তাই রোগীকে অবশ্যই এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
৫. পেটের নিম্নভাগের পরীক্ষার প্রস্তুতি:
রোগীকে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা খালি পেটে থাকতে হবে এবং পরীক্ষার দুই ঘন্টা পূর্বে ৮-১০ গ্লাস পানি খেতে হবে। পেটের নিম্নভাগে আমাদের কিডনি, মূত্রনালী ও মূত্রথলি সহ যৌনাঙ্গ থাকে। তাই পেটের নিম্নভাগের কার্যকারিতাসহ অন্যান্য অঙ্গ, বিশেষ করে প্রজনন অঙ্গসমূহ ভালভাবে দেখার জন্য প্রস্রাবের পরিমিত চাপ থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রস্রাবের চাপ যেন মাত্রাতিরিক্ত না থাকে। কারন তা রোগীর জন্য অস্বস্তিকর এবং চিকিৎসকের জন্যও অসুবিধার কারন।
৬. গর্ভাবস্থায় পরীক্ষার প্রস্তুতি:
যদি রোগী গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করতে আসে তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারনভাবে যে প্রস্তুতি প্রয়োজন তাই তাক নিতে হবে। এক্ষেত্রে রোগীকে ৬-৮ ঘন্টা খালি পেটে থাকতে হবে এবং পরীক্ষার দুই ঘণ্টা পূর্বে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
যদি রোগী গর্ভাবস্থার চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে আসে তাহলে খাবারের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে পরীক্ষার এক ঘন্টা পূর্বে থেকে প্রস্রাবের চাপের জন্য বাথরুমে যাওয়া যাবেনা। এক্ষেত্রে অধিক পানি পানের প্রয়োজন নেই। অল্প প্রস্রাবের চাপেই আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করা সম্ভব।
আর রোগী যদি গর্ভাবস্থার ছয় থেকে নয় মাস সময়কালের মধ্যে আসে তবে কোনরকম প্রস্তুতি না নিলেও চলবে। কারন এসময় স্বাভাবিকভাবেই মায়ের শরীর আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকে।
৭. ডায়াবেটিস রোগীর জন্য প্রস্তুতি:
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যেহেতু একটানা ৮-১০ ঘন্টা খালি পেটে থাকা সম্ভব হয়না সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যথাসম্ভব খালি পেটে থাকতে হবে। খুব অসুবিধা হলে শুকনা টোস্ট বিস্কুট খাওয়া যেতে পারে। ডায়াবেটিসের অন্যান্য ওষুধ যেমন: ইনসুলিন নেয়াতে কোন অসুবিধা নাই।
উপরিউক্ত বিষয়গুলি আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে বিষয়গুলো জানতে হবে। রোগীকে সঠিক ও পরিপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেয়া মূলত চিকিৎসকের কাজ। রোগী ও চিকিৎসকের সমন্বিত প্রয়াসেই কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।