এসিডিটির লক্ষণসমূহ এবং এর থেকে মুক্তির উপায়

হাইপার এসিডিটি বা এসিড ডিসপেপসিয়া খুব পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। আমাদের পাকস্থলি থেকে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসরণের কারনে হাইপার এসিডিটি হয়। বিভিন্ন কারনে হাইড্রোক্লেরিক এসিড নিঃসরণ বাড়তে পারে। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ গ্রহণে, অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া ও মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ায় বা অত্যাধিক মানসিক চাপজনিত কারনে এসিড নিঃসরণ বাড়ে। এছাড়া আমাদের পাকস্থলীর প্রাচীর থেকে মিউকাস ক্ষরণ কমে গেলে, হিস্টামিন নামক পদার্থ বেশি নির্গত হলে, অতিরিক্ত চা-কফি পান করলে এবং ধূমপান বা মদ্যপান করলেও হাইপার এসিডিটির বিড়ম্বনা দেখা দেয়।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় নারীদের এসিড ডিসপেপসিয়া হতে পারে। স্থুলতা, অনিদ্রা এবং বয়স বাড়ার সাথেও এর সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেও হাইপার এসিডিটি হতে পারে।

আমাদের দেশে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছাড়াই ব্যথার ওষুধ অহরহ গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে অ্যাসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক, কিটোরোলাক, আইবুপ্রোফেন, ইন্ডোমিথাসন ইত্যাদি ব্যথানাশক ওষুধ হামেশাই ব্যবহৃত হয়। এগুলো হাইপার এসিডিটির হার বাড়ায়। অনেকক্ষেত্রে এমনকি পেটে ব্যথা অনুভূত হলেও অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসব ব্যথানাশক ব্যবহার করে বসে। যা হাইপার এসিডিটির তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

হাইপার এসিডিটি কিভাবে বুঝবেন

হাইপার এসিডিটির লক্ষণ হচ্ছে-

বুক জ্বালা করা

ঢেকুর উঠা

বমিভাব বা বমি হওয়া

পেটের উপরের অংশে ব্যথা করা বা জ্বালা-পোড়া অনুভূত হওয়া

ক্ষুধামন্দা

অল্প খেলেই ভরাপেট অনুভূত হওয়া

ওজন কমে যাওয়া,

পিঠে ও বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া

 

প্রতিরোধের উপায়

হাইপার এসিডিটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাধা সৃষ্টি করে, কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই সময়মত এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে পরিণতি হিসাবে পেপটিক আলসার ডিজিস, গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পাকস্থলীর ক্যান্সারের মত জটিল রোগ দেখা দিতে পারে।

সময়মত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে হাইপার এসিডিটির প্রকোপ অনেকটাই কমিয়ে ফেলা যায়। পাশাপাশি পরিমিত বিশ্রাম গ্রহণ, নিয়মিত শরীর চর্চা, অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করলে এ সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। ফাস্ট ফুড, বোতলজাত খাবার ও কোমল পানীয় পরিহার করতে হবে। তার বদলে সবুজ শাক-সব্জি বেশি গ্রহণ করতে হবে। তবে কুমড়া, মূলা, পেঁয়াজ, মরিচ ও নারিকেল এড়িয়ে চলা ভালো। কলা ও ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় তা এসিড নিঃসরণ কমায়। এছাড়া খাবার পরে ঠাণ্ডা দুধ ও ফলের রস পান করলে এসিডিটির মাত্রা কমে।

পানি খেতে হবে বেশি করে। তবে খাবার গ্রহণের ৩০ মিনিট পরে পানি খাওয়া উত্তম। এতে খাবারের পরিপাক ভালো হয়। স্থূলতা থাকলে ওজন কমানোটাই বাঞ্ছনীয়।

চিকিৎসা

আমাদের দেশে হাইপার এসিডিটির ওষুধ বাজারে খুবই সহজলভ্য। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই যে কেউ এসব ওষুধ কিনতে পারে। সাধারণ মানুষও এসব ওষুধের নামের সাথে পরিচিত। কিন্তু হাইপার এসিডিটির সমস্যা হলেই নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তার প্রদত্ত ব্যবস্থাপত্র অনুসারে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে রোগ সারার পরিবর্তে তা আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এমনকি ওষুধ গ্রহণজনিত বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। তবে এসিড ডিসপেপসিয়ার মাত্রা একেবারে অসহনীয় হলে এন্টাসিড ট্যাবলেট চুষে খাওয়া যেতে পারে। এতে উপকার পাওয়া যায়।

হাইপার এসিডিটি হলেই ভয় পাওয়ার কিছু নাই। সময়মত ডাক্তারের পরামর্শ নিলে এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top