কিডনি আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি আমাদের শরীরে রক্তের পরিশোধন, পানি এবং অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তকণিকা উৎপাদনসহ নানা কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিডনির প্রধান রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে নেফ্রাইটিস, প্রস্রাবে প্রদাহ এবং কিডনি ফেইলইউর বা কিডরি বিকল হয়ে যাওয়া। এসব রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দাঁতের বিশেষ যত্ন গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনি রোগীর দাঁতের সমস্যা:
১. কিডনি রোগীর অ্যানিমিয়া হয়ে থাকে, ফলে মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।
২. কিডনি রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকার কারণে ইনফেকশন বা সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
৩. হিমোডায়ালাইসিসএর সময়ে অনেক ধরনের তরল খাবার খাওয়া নিষেধ থাকে। সেই সাথে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়ও মুখের শুস্কতা বেড়ে যায়।
৪. মুখের দুর্গন্ধ ও মুখের স্বাদ নষ্ট হওয়া– কিডনি রোগীদের মুখে সাধারণত: এমোনিয়ার ন্যায় দুর্গন্ধ বের হয়। হেমোডাইসিস রোগীদের ক্ষেত্রে মুখের স্বাদ নষ্ট হওয়া ও জিহ্বা ভারী হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
৫. ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ কমে যাবার কারণে চোয়ালের হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দাঁত নড়ে ও পড়ে যেতে পারে।
কিডনি রোগীর দাঁতের যত্ন:
কিডনি রোগীর রোগ শনাক্ত হবার সাথে সাথে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে সার্জারি ছাড়া নিয়মিত দাঁতের ও মাড়ির স্কেলিং করা উচিত, যাতে ডেন্টাল প্লাক জমা হতে না পারে। প্রয়োজনবোধে ক্যারিজ আক্রান্ত দাঁতগুলোতে ডেন্টাল ফিলিং করতে হবে। একজন কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীর সার্জারির আগেই তার মুখ ও দাঁতের চিকিৎসা কাজ সম্পন্ন করা জরুরী। কারণ গবেষণায় দেখা যায় মুখের প্রদাহ একজন কিডনি রোগীর জন্য ক্ষতিকর। অতএব, কিডনি রোগীদের বিশেষ করে ট্রান্সপ্লান্ট করা রোগীদের চিকিৎসার পূর্বে অবশ্যই মুখ ও দাঁত পরীক্ষা করা জরুরি এবং সেই অনুযায়ী রুটিন ডেন্টাল স্কেলিং করাও অত্যাবশ্যক।
কিডনি রোগীর দাঁতের চিকিৎসা গ্রহণের আগে তাঁর কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াটা জরুরি। কারণ তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী ডেন্টিস্ট অ্যান্টিবায়োটিক প্রেস্ক্রাইব করবেন। আবার রোগীকে তাঁর ডেন্টিস্ট-এর কাছেও গ্রহণকৃত সব ধরণের ওষুধের কথা জানাতে হবে। কারণ হেমোডায়ালাইসিস এর রোগীকে হেপারিন জাতীয় ঔষধ দেয়া হয়, এতে রক্ত বেশি তরল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দাঁতের কোন সার্জারি করা উচিত নয়। নয়ত রক্তপাত বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।