কিডনি রোগের কারণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: যে বিষয়গুলো সবার জানা প্রয়োজন

আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কিডনি (Kidney)। কিডনির প্রতি অযত্ন বা অনিয়মের ফলে জীবন হুমকির মুখে পরতে পারে যে কোন বয়সে। কিডনি ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকবে। আমরা সবাই কম বেশি কিডনি রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানি। কিন্তু কিডনির রোগ সম্পর্কে হয়ত অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না। যেহেতু সুস্থ জীবনের জন্য কিডনির সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগের কারণ, ঝুঁকি এবং কিডনি রোগ থেকে দূরে থাকার উপায়, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানা জরুরী। আজকে আমরা এ সম্পর্কেই জানব।

কিডনির কাজ এবং ভূমিকা:  

আমাদের শরীরে যে দুটো Kidney আছে তাদের কাজ হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১৭০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে শরীরকে সুস্থ রাখা। দুটো কিডনিতে প্রায় ২০-২৫ লাখ ছাঁকনি রয়েছে, যা অনবরত রক্তকে পরিশোধিত করে যাচ্ছে। কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে এবং দেহের অস্থিগুলোকে শক্তিশালী করে থাকে।

কিডনি রোগের কারণ:

১. কিডনি রোগের অন্যতম প্রধাণ কারণ কিডনির প্রদাহ। কিডনির প্রদাহকে নেফ্রাইটিস বা Nephritic Syndrome বলে, যা কিডনির ছাঁকনি বা ফিল্টার মেমব্রেনকে ক্ষতবিক্ষত করে। এই রোগের কারণে শরীর থেকে অত্যাবশ্যক Protein বেরিয়ে যায়।

২. উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) ও ডায়াবেটিস (Diabetes) নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও হতে পারে কিডনি রোগ। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগ নয়, তবু কিডনিকে আক্রান্ত করে কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করে।

৩. যাদের রক্তচাপ অতিরিক্ত কম থাকে, তাদেরও হঠাৎ করে কিডনি খারাপ হতে পারে।

লক্ষণ বা উপসর্গ:

কিডনির রোগে আক্রান্তরা শুরুর দিকে সমস্যা টের পান না। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুরুর দিকে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, বমি বা বমি ভাব, পায়ে পানি আসা-এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। উপরোক্ত যেকোন লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির অবস্থা জেনে নেওয়া উচিত।

রোগনির্ণয়:

কিডনির পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব পরীক্ষা এবং রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ নির্ণয় করা। শুধু রক্তচাপ, প্রস্রাব পরীক্ষা এবং রক্তের ক্রিয়েটিনিন ও সুগার পরীক্ষা করেই জানা যায় কিডনি রোগ আছে কি না।

কিডনি রোগের প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা:

১. যারা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে চান, তাদের জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা Balanced Diet গ্রহণ, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং জীবনাচার মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

২. কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনই হলো বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। দুটো কিডনি ৯০ শতাংশ অকেজো হওয়ার পরই কেবল Dialyses বা Kidney Transplant প্রয়োজন হয়।

৩. গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী কিডনি রোগে ভোগে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ রোগীর কিডনি অকেজো হতে পারে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখলে কিডনি রোগ থেকে রেহাই পাবার সম্ভাবনা আছে।

৪. শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিলাইটিস, প্রস্রাবে প্রদাহ ও চর্মরোগের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করুতে হবে।

কিডনি নষ্ট হলে ডায়ালাইসিস করে চিকিৎসা করার সামর্থ্য বাংলাদেশে ১০ শতাংশেরও নেই। সচেতন হলে স্বল্প ব্যয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশে বর্তমানে দুই কোটি লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। এভাবে কিডনি রোগী বৃদ্ধি পেতে থাকলে ২০২০ সালে বাংলাদেশে তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) কিডনি রোগে আক্রান্ত হবে বলে জরিপে জানা গেছে। জেনে রাখা দরকার, প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার রোগী কিডনি অকেজো হওয়ার কারনে অকালে মৃত্যুবরণ করে। তাই কিডনি রোগ সম্পর্কে জানুন, সতর্ক থাকুন এবং প্রতিরোধ করুন।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top