কোলন ক্যান্সারের ৭টি লক্ষণ ও চিকিৎসা

ক্যান্সার এমন এক ব্যাধী যা মানবদেহের যেকোন অংশকে আক্রমণ করতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষাষায় বৃহদান্তের ক্যান্সারকে বলা হয় বাওয়েল বা কোলন ক্যান্সার (Bowel or colon cancer)। ক্ষুদ্রান্তের তুলনায় বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের হার অনেক বেশি। পশ্চিমা বিশ্বে নারী-পুরুষ উভয়েরই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। আমাদের দেশেও ইদানিং এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

কোলন ক্যান্সার কি?

বৃহদান্ত্রে যখন কোষ বিভাজনের নির্দিষ্ট ধারা ভঙ্গ হয় এবং কোষগুলো অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় তখন তাকে কোলন ক্যান্সার বলে। বেশিরভাগ কোলন ক্যান্সারই বিভিন্ন ধরনের পলিপ (adenomatous polyp)-এর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির (proliferation)-এর ফল। প্রথমে বৃহদন্ত বা অ্যাপেডিক্সের ক্ষুদ্রাকার কোষীয় পিন্ডে পলিপ তৈরী হয়। ধীরে ধীরে পলিপ থেকে ক্যান্সার সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে দেহের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে সুস্থ টিস্যুকে আক্রমণ করে।

কোলন ক্যান্সারের কারন:

১. অন্ত্রের পলিপ (দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে),
২. দীর্ঘস্থায়ী আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগ,
৩. বংশগত। বংশগত কারণে জিনের পরিবর্তন হতে পারে যা পরবর্তী সময়ে কোলন ক্যান্সারকে ত্বরান্বিত করে। এছাড়া কারো রক্তের সম্পর্কের কোন আত্মীয়-পরিজন কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকলে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

কাদের বেশি হয়:

১. পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি,
২. নারীদের তুলনায় পুরুষদের কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি,
৩. অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ( চর্বিযুক্ত ও মুখরোচক অস্বাস্থ্যকর খাবারে আসক্তি)
৪. মদ্যপান
৫. ডায়বেটিস
৬. পূর্ববর্তী অন্ত্রের রোগ (যেমন: Crohn’s disease, Ulcerative colitis ইত্যাদি)।

লক্ষণসমূহ:

১. তীব্র পেটব্যথা
২. ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
৩. পেটের ভিতর থেকে খাবার উগড়ে আসা
৪. পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
৫. হঠাৎ ওজনহ্রাস
৬. রক্তশূন্যতা
৭. জন্ডিস

প্রতিরোধে করণীয়:

১. নিয়মিত ভিটামিন, মিনারেলযুক্ত খাবার গ্রহণ করা
২. খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার রাখা
৩. মদ্যপান পরিহার করা
৪. ধূমপান পরিহার করা
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
৬. দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা
৭. রোগ নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো

কোলন ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা:

বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোলন ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আপনার যদি কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। বিভিন্ন স্ক্রিনিং পরীক্ষা পলিপ বা কোলন ক্যান্সার সনাক্তকরনে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
যেমন:

১. ফিকাল অকাল্ট ব্লাড টেস্ট।
২. কোলনস্কোপি।
৩. ডাবল কন্ট্রাস্ট বেরিয়াম এনেমা।

সবার জন্য সকল পরীক্ষা উপযুক্ত নাও হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পূর্বে তাই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা জরুরী।

চিকিৎসা:

কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের গ্রেড কি এবং কোন স্টেজে আছে তার উপর। টিউমারের আকার, লসিকা গ্রন্থি (লিম্ফ নোড) এবং দেহের অন্য স্হানে ছড়িয়ে পড়ার উপর নির্ভর করে কোলন ক্যান্সারকে ০ থেকে ৪ গ্রেড পর্যন্ত ভাগ করা হয়। এই গ্রেডিং অনুসারেই চিকিৎসা দেয়া হয়। কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে:

১. সার্জারি (colectomy)
২. রেডিয়েশন থেরাপি
৩. কেমোথেরাপি

আধুনিক যুগে আমাদের জীবন-যাপনের ধরন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে রোগের ধরন। বাংলাদেশে ক্যান্সার আত্রান্ত রোগীদের প্রায় ৭ শতাংশ কোলন ক্যান্সারে ভুগছে। প্রতিরোধযোগ্য, চিকিৎসা যোগ্য এবং পরাজেয় এই রোগকে আসুন আমরা সকলে মিলে প্রতিহত করি। এর জন্য দরকার একটু সতর্কতা, সচেতনতা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top