মাথা ঘুরানো আর বমি বমি লাগা মানেই আমাদের দেশে প্রেগন্যান্ট বা গর্ভবতী হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই একই ধারণা পোষন করে থাকে!
মাথা ঘুরানো ও বমি বমি ভাবের সাথে প্রেগন্যান্ট হওয়ার শর্ত হলো – পিরিয়ড বা মাসিক বন্ধ হওয়া। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনেকেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে থাকেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতী না হয়েও টেস্ট পজিটিভ আসতে পারে। এমন কি কি কারন আছে- তা নিয়েই এখানে আলাপ করব।
তার আগে চলুন জেনে নেই- প্রেগন্যান্সি টেস্ট আসলে কি এবং এর মাধ্যমে কি দেখা হয়?
গর্ভবতী মায়ের প্লাসেন্টা (Placenta)-এর সিনসাইটোট্রফোব্লাস্ট কোষ (Syncytotrophoblast Cell) থেকে নিঃসৃত হয় হিউম্যান করিওনিক গোনাডোট্রফিন (HCG) হরমোন । এই হরমোন লেভেল বেড়ে গেলেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ হয়। গর্ভের প্রথম মাসে এটার পরিমাণ থাকে ৫-৫০ MIU/ml এর মত। কিন্তু গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকে এটার পমিাণ লাখও অতিক্রম করতে পারে ।
এবার আসুন, কি কি কারনে গর্ভবতী না হয়েও টেস্ট পজিটিভ হতে পারে?
১. মেয়েদের কিছু জার্ম সেল টিউমার (Germ cell Tumor) হতে পারে। যেমন: ডিজজার্মিনোমা (Dysgerminoma)। এটা ওভারির একটা টিউমারের নাম। এই রোগে অস্বাভাবিকভাবে HCG হরমোন নিঃসৃত হয়। তখন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে পজিটিভ হবে। কারন এ সময় HCG লেভেল বেশি থাকে।
২. বিভিন্ন ট্রফোব্লাস্টিক টিউমার (Trophoblastic Tumor) যেমন: হাইডাটিডফর্ম মোল (Hydatiform Mole), কোরিওকারসিনোমা (Choriocarcinoma) ইত্যাদিতেও একই ঘটনা ঘটে। শরীরে টিউমারের কারনে এ সময় প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে ফলাফল পজিটিভ আসবে। মনে হবে প্রেগন্যান্ট ।
৩. শরীরের যেখানে ইনসুলিন তৈরী হয় সেখানেও কিছু টিউমার হতে পারে যা HCG নিঃসরণ করে। এক্ষেত্রেও টেস্ট পজিটিভ হতে পারে।
৪. বমি বন্ধ হওয়ার জন্য বাজারে বিভিন্ন নামে প্রোমিথাজিন (Promethazine) ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এগুলো খেলেও প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ হতে পারে । দেখা গেলো এমন হলো যে, এক মেয়ে বাসে চড়লে বমি হয় বলে বমির ওষুধ খেয়েছে, বমি ভাব বা Motion Sickness বন্ধ হওয়ার জন্য। বাস থেকে নেমে আবার একটু মাথা ঘুরালো আর বমি বমি লাগলো। সন্দেহ করে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করালো। এক্ষেত্রেও মিথ্যামিথ্যি পজিটিভ রেজাল্ট আসতে পারে।
তাই প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ হলেই গর্ভবতী হয়েছে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখেই বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা আবশ্যক।