জরায়ু ক্যান্সারের ৫টি লক্ষণ ও চিকিৎসা

সার্ভিকাল ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সার রোগটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। ক্যান্সারে আক্রান্ত বাঙ্গালি নারীদের এক-চতুর্থাংশ জরায়ুর ক্যান্সারে ভুগছেন। আমাদের দেশে নারীরা সাধারণত এসব সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করতে চায় না। ফলে ক্যান্সার ধীরে ধীরে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সাধারনত লাসিকা ও রক্তের মাধ্যমে তা লিভার, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ সময়ই জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্তরা এমন সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন যে তখন আর কিছুই করার থাকে না। ফলে জীবনঘাতী এই ক্যান্সার কেড়ে নিচ্ছে বহু প্রাণ।

জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য মূলত হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV-16, 18) দায়ী। এই ভাইরাসসহবাসের মাধ্যমে ছড়ায়। অল্প বয়সে বিয়ে হলে, দীর্ঘ সময়ব্যাপী (৫ বছরের বেশি সময়কাল ধরে ) জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খেলে (OCP) জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া ধূমপান করলেও এই ক্যান্সার হতে পারে। কেননা সিগারেটে এমন এক ধরনের রাসয়নিক পদার্থ রয়েছে যা cervix বা জরায়ুর কোষকে ধংস করে ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়ায়। সাধারণত ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে ২৫ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি নেই বললেই চলে।

জরায়ুর ক্যান্সারের উপসর্গ:

১) দুই মাসিক এর অন্তর্বর্তী সময়ে হালকা রক্তপাত হওয়া,

২) মাসিকের সময় রক্তপাতের পরিমান স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদী হওয়া,

৩) সহবাসের পরে রক্তপাত হওয়া,

৪) সহবাসের পরে ব্যথা অনুভূত হওয়া

৫) মাসিক বন্ধ হবার পরও মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হওয়া।

প্রতিরোধ:

সহবাসের সময় কনডম ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য দায়ী (HPV) এর অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া প্যাপিলোমা ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন বা টীকা পাওয়া যায়। এটা পুরপুরি নিরাপদ এবং শতভাগ কার্যকর। এই ভ্যাক্সিন ১১ বছর বয়স থেকে শুরু করে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত দেয়া সম্ভব। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে এই vaccination প্রোগ্রাম শুরু হলেও এখনো এর ততটা ব্যাপ্তি ঘটেনি।

রোগ নির্ণয় বা screening:

জরায়ুর মুখে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের screening tests রয়েছে।যেমন Pap smear ও VIA টেস্ট।এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার VIA পরীক্ষাটকেই সর্বসাধারণের জন্য sceening test হিসাবে নির্ধারণ করেছে। এর কারন হচ্ছে VIA test অতি সহজেই ও স্বল্পমূল্যে করা সম্ভব। সকল সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষাটি বিনামূল্যে করানোর সুযোগ রয়েছে।

চিকিৎসা:

Cervical cancer চিকিৎসার কিছু রকমভেদ রয়েছে। যাদের এখনও ক্যান্সার হয় নি অর্থাৎ pre-cancer stage এ আছেন ,তাদের চিকিৎসা হাসপাতালের বহিঃবিভাগে local anaesthesia (স্থানিক অবশ)-এর মাধ্যমে করা হয়।এতে নিরাময়ের হার ৮০-৯৬%। আর যাদের শরীরে এই ক্যান্সার পুরোপুরি বাসা বেঁধে ফেলেছে তাদের জন্য ক্যান্সারের ধাপ অনুযায়ী সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মত বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও ৮০ শতাংশ ক্যান্সারের রোগী এমন সময় আসে যখন আর অপারেশন করে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হয়ে উঠে না। অথচ সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই একে সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top