টাইফয়েড রোগের নাম শুনে নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একসময় এ রোগ হওয়া মানেই মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। ধারণা করা হয়, টাইফয়েড রোগের প্রকোপেই গ্রীক সভ্যতা তার জৌলুস হারাতে শুরু করে। টাইফয়েড মূলত একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। সালমোনেলা টাইফি (Salmonella Typhi) নামক ব্যাকটেরিয়া এই রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
টাইফয়েড যেকোন বয়সে হতে পারে। তবে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলেই টাইফয়েড হবে এমন কোন কথা নাই। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে অনেক সময়ই সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অন্যদিকে কম রোগপ্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্নদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশেষ করে, এইচআইভি পজিটিভ ও এইডস রোগীরা সহজেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া দূষিত খাবার ও পানি পান করলে এবং যেসব এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি সেসব জায়গায় ভ্রমণ করলেও এ রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
টাইফয়েডের লক্ষণ:
সাধারণত টাইফয়েডের জীবাণু সংক্রমণের ৬ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
প্রথম সপ্তাহে, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাথা ব্যথা, কাশি, অস্বস্তিকর অনুভূতি দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
দ্বিতীয় সপ্তাহে, ১০৩-১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট জ্বর থাকতে পারে। এর সাথে অস্বাভাবিক ধীর নাড়ির স্পন্দন ও হৃদস্পন্দন পাওয়া যেতে পারে। বুকে লালচে গোলাপী দাগ দেখা যায়। রোগীর মানসিকভাবে দ্বিধান্বিত থাকতে পারে। এ কারনে এ জ্বরকে নার্ভাস ফিভারও বলা হয়ে থাকে। এছাড়া পেটে প্রদাহসহ পেট ফাঁপা এবং ডায়রিয়ায়ও আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
টাইফয়েড প্রতিরোধের উপায়:
কথায় আছে, Prevention is better than Cure. আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থাতেও প্রতিকার নয় বরং প্রতিরোধের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। টাইফয়েড প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে তা হল-
১) ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করা।
২) নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করা।
৩) স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার করা।
৪) কাঁচা বা অপরিষ্কার শাক-সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা।
৫) খাবার গরম করে খাওয়া।
৬) টাইফয়েড ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা। এতে প্রায় ৩ বছরের মত সুরক্ষা পাওয়া যায়।
টাইফয়েডের চিকিৎসা:
যেহেতু এ রোগ প্রাণঘাতী তাই যত দ্রুত সম্ভব রোগনির্ণয় হওয়া প্রয়োজন। রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্লাড কালচার, স্টুল কালচার, অস্থি মজ্জা পরীক্ষা ও ভিডাল টেস্ট (Widal test) করা যেতে পারে। প্রথম সপ্তাহে ভিডাল টেস্ট (Widal test) –এর রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পারে। অর্থাৎ তাৎপর্যপূর্ণ কিছু না আসার সম্ভাবনাই বেশি। তাই প্রথম সপ্তাহে এই পরীক্ষা করা যুক্তিযুক্ত নয়। লক্ষণ দেখা দিলেই যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হতে পারে। ডায়রিয়ার জন্য শিরাপথে অথবা মুখে স্যালাইন দেয়া যেতে পারে। রোগীকে অবশ্যই সুষম খাবার দিতে হবে। অনেক সময় সংক্রমণের কারণে খাদ্যনালীতে ছিদ্র কিংবা পিত্তনালীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।