নাকের প্রচলিত অসুখগুলোর মাঝে পলিপ অন্যতম। নাককে ঘিরে থাকা আমাদের মুখমন্ডলের হাড়গুলোর ভেতরে কতকগুলো বায়ু পূর্ণ ফাঁকা গহ্বর থাকে। এই ফাঁকা স্থানগুলোকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় “সাইনাস”। আমাদের নাকের সঙ্গে এই সাইনাসগুলো সংযোগনালী দিয়ে যুক্ত থাকে। কোন কারণে বার বার প্রদাহ হলে “সাইনাস মিউকোসা” অর্থাৎ সাইনাসের আভ্যন্তরীন আবরণী ফুলে যায়। ফুলে যাওয়া সাইনাস মিউকোসা যখন নাকের সংযোগনালী দিয়ে সামনে বা পেছনের দিকে বেরিয়ে আসে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তাকেই পলিপ বলে। নাকের পলিপ সাধারণত মসৃণ এবং কিছুটা ফ্যাকাসে বা ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে।
ধরণ:
নাকের পলিপ দুই ধরণের হয়ে থাকেঃ
১. এথময়ডাল পলিপ: এটি এলার্জির কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত দুই নাকেই হয়।
২. এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপ: এটি সংক্রমণের (ইনফেকশন) কারণে হয়ে থাকে। এক পাশের নাকে হয় এবং সাধারণত নাকের পেছনের দিকে চলে যায়।
রোগের কারণ:
১. এলার্জি: এলার্জি, অ্যাজমা (হাঁপানি), একজিমা প্রভৃতি রোগ থাকলে নাকের পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২. সংক্রমণ: সাইনাসের সংক্রমণ যেমন সাইনুসাইটিস থাকলে নাকের পলিপ হতে পারে।
নাকের পলিপের লক্ষণ:
১. নাক বন্ধ থাকা (এক বা দুই নাসারন্ধ্র একসঙ্গে বন্ধ থাকতে পারে)
২. নাক দিয়ে পানি পড়া
৩. বেশি বেশি হাঁচি দেওয়া
৪. নাকে কোনো গন্ধ না পাওয়া
৫. মাথা ব্যথা করা
৬. নাকি সুরে কথা বলা
৭. মুখ হা করে ঘুমানো
সময়মত চিকিৎসা না করালে যা হয়:
১. অ্যাজমার আক্রমণ বেড়ে যায়।
২. ঘুমের সময় নাক বন্ধ হয়ে যায়, নাক ডাকা শুরু হয়।
৩. সাইনুসাইটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
চিকিৎসা:
১. ওষুধ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেলে পলিপ এর আকার ছোট হয়ে আসে এবং নাক বন্ধ হবার প্রবণতা দূর হয়। কিন্তু ওষুধ বন্ধ করলে পলিপের আকার বাড়তে থাকে।
২. সার্জারি: নাকের পলিপের মূল চিকিৎসা হলো অপারেশন। অপারেশন করলে সাধারণত নাকের পলিপ ভালো হয়ে যায়। তবে এই পলিপ বার বার হতে পারে এবং প্রয়োজনবোধে কয়েকবার অপারেশন করা লাগতে পারে।
এলার্জি থেকে সাবধানে থাকলে এবং নাক ও সাইনাসের সংক্রমনের সুচিকিৎসা করালে পলিপ হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।