দৈনন্দিন জীবনে যে কয়েকটি ঘটনা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাইগ্রেন জনিত মাথাব্যথা। মেয়েদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। সাধারণত ২০-৩০ বছর বয়সে এই রোগ শুরু হয়। যেকোন পেশার লোকদেরই মাইগ্রেন হতে পারে। সোজা বাংলায় অনেকে একে আধকপালি বলে থাকেন। বর্তমানে বিশ্বে শতকরা প্রায় ১১ জন বয়স্ক মানুষ মাইগ্রেন জনিত মাথা ব্যথায় ভোগেন। সাধারণত ২৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে এর ব্যাপ্তি বেশি হয়।
মাইগ্রেন কি?
মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাথার যেকোন এক পাশ থেকে শুরু হয়ে তা বিস্তৃত আকার ধারণ করে। এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে সেগুলো মাথাব্যথার প্রারম্ভে স্ফীত হয়ে ফুলে যায়। এছাড়া মাথাব্যথার সাথে সাথে বমি ও বমি বমি ভাব এবং রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে। সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়। দৃষ্টিস্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথায় রক্তক্ষরণ প্রভৃতি কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। মনে রাখতে মাইগ্রেন একধরণের প্রাইমারী হেডেক, যা নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। চিকিৎসকের এর অধীনে এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা উচিত। মাইগ্রেন-এর ব্যথা চোখের কোন সমস্যার জন্য হয় না।
মাইগ্রেনের কারন:
মাইগ্রেন কেন হয় তা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত অন্য কোনো কারনেও হতে পারে। সাধারণত পুরুষের চেয়ে মহিলাদের এটি বেশি হয়। পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে এই অনুপাত ১:৫। মহিলাদের মাসিকের সময় এই রোগটি বেশি দেখা দেয়। চলুন মাইগ্রেনের আরো কিছু কারন জেনে নেই-
১. চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া,
২. জন্মবিরতিকরণ ওষুধ গ্রহণ,
৩. দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ,
৪. অতিরিক্ত ভ্রমণ,
৫. অতিরিক্ত ব্যায়াম করা,
৬. অনিদ্রা,
৭, অনেকক্ষন ধরে টিভি দেখা,
৮. দীর্ঘক্ষন যাবত কম্পিউটারে কাজ করা,
৯. মোবাইলে কথা বলা
১০. দীর্ঘক্ষণ ধরে অতি উজ্জ্বল আলোতে অবস্থান করা।
মাইগ্রেনের লক্ষণ:
মাইগ্রেন বয়ঃসন্ধিকাল থেকে শুরু হয় এবং মাঝ বয়স পর্যন্ত কিছু দিন বা কয়েক মাস পর পর হতে পারে। মাথাব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোন কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তিবোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে। মাথার যে কোনো অংশ থেকে এ ব্যথা শুরু হয়। পরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। শব্দ ও আলো ভালো লাগে না। কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ ও আলোয় মাথাব্যথা বেড়ে যায়।