রক্তদান, রক্ত পরিসঞ্চালন বা ব্লাড ট্রান্সফিউশন (Blood Transfusion) চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অভাবনীয় সাফল্য। রক্তদানের ফলে বাঁচছে অসংখ্য প্রাণ, কমছে মৃত্যুর হার। তবে রক্তাদানের ব্যাপারে কয়েকটি বিষয় না জেনে নিলে দেখা দিতে পারে নানা জটিলতা। ঠিকমত পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করে রক্ত নিলে অনেক সময় বিভিন্ন সংক্রামক ও মরণঘাতি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। এ কারনে রক্তদানের আগে কয়েকটি বিষয় জানা জরুরি। চলুন সেগুলো জেনে নেই-
১) রক্তদান বা ট্রান্সফিউশনের পূর্বে অবশ্যই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেয়া প্রয়োজন। প্রথমে রক্তদাতার ব্লাড গ্রুপিং করে রোগীর ব্লাড গ্রুপের সাথে মেলাতে হবে। এরপর ক্রস ম্যাচিং করতে হবে। অনেকেই ক্রস ম্যাচিং ব্যাপারটা হালকা ভাবে দেখেন এবং অবহেলায় বাদ দিয়ে যান। অথচ এটা না করলে রক্ত নেয়ার পরে রোগীর শরীরে এনাফাইল্যাক্টিক রি-অ্যাকশন হতে পারে। যার ফলে মৃত্যুও হতে পারে।
২) হেপাটাইটিস-বি ও সি,এইচআইভি (HIV), টাইফয়েড, কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের জীবাণু সহজেই রক্তের মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করতে পারে। তাই রক্ত নেয়ার আগে স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে রক্তে এসব রোগের জীবাণু আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
৩) রক্তদাতার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। ইদানিং যারা নেশা করে তাদের মধ্যে রক্ত বিক্রি করে নেশার টাকা জোগাড় করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো ভাবেই মাদকাসক্ত বা নেশাখোরের রক্ত গ্রহণ করা যাবে না।
৪) রক্তদাতার বয়স অবশ্যই ১৮-৫৭ বছরের মধ্যে এবং ওজন কমপক্ষে ৪৫ কেজি বা ১০০পাউন্ড হতে হবে। তার রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার হতে হবে স্বাভাবিক।
৫)একবার রক্ত দেয়ার ছয় মাসের মধ্যে রক্তগ্রহণ এবং চার মাসের মধ্যে রক্তদান করা যাবে না। ছয় মাসের মধ্যে বা বর্তমানে কোন ভ্যাক্সিনও গ্রহণ করা যাবে না।
৬) মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক চলাকালীন বা গর্ভকালীন সময়ে রক্ত দেয়া যাবে না।
উপরের কথাগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলেই কেবল সফল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সম্ভব। তা না হলে ট্রান্সফিউশন পরবর্তী নানা ধরনের জটিলতা ও বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।