শিশুর স্থুলতার কারন ও প্রতিকারে ৮টি করণীয়

অনেক মা-বাবাই শিশুর ওজন বৃদ্ধিকে আনন্দের সাথে নেন। তাদের অনেকেই শিশুর অত্যাধিক ওজন বৃদ্ধির  নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিয়ে চিন্তা করেন না। যখন একটি শিশুর বয়স এবং উচ্চতার তুলনায় ওজন অনেক বেশি হয় তখনই স্থুলতা দেখা যায়। স্থুলতা মানে শরীরের অতিরিক্ত ওজন। একটা ছেলে অথবা মেয়ের শৈশবকালে ওজন কত হবে তা তার ক্যালরি গ্রহণ ও ব্যায়ের উপর নির্ভর করে। আজকাল দেখা যায় ছেলে-মেয়েরা দিনের অনেকটা সময় ধরে মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নিয়ে ঘরে বসে থাকে। এর পাশাপাশি এটা-সেটা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতেই থাকে। এতে তাদের শরীর যেমন অসক্রিয় হয়ে পড়ে তেমনি আস্তে আস্তে ওজনও বাড়তে থাকে।

শিশুর স্থুলতার কারন:

শিশুরা অনেক কারনেই স্থুলতায় ভুগতে পারে। এর মধ্যে প্রধাণ কারন গুলো হচ্ছে-

১. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব,

২. অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া,

৩. অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া,

৪. চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া,

৫. কোমল পানীয় খাওয়া,

৬. উপরের কারনগুলোর সম্মিলিত ফলাফলের কারনেই মূলত বেশিরভাগ শিশু স্থুলতায় ভোগে।

৭. আবার কখনও কখনও হরমোন জনিত কারনেও শিশুদের স্থুলতায় ভুগতে দেখা যায়।

শিশুর স্থুলতার ফলাফল:

অধিকাংশ স্থুলকায় শিশু পরিণত বয়সে এসেও স্থুলতায় ভুগতে থাকে। ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। স্থুল শিশুদের যেসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে সেগুলো হল:

১. ধমনি ও শিরা সংক্রান্ত রোগ

২. উচ্চ রক্তচাপ

৩. ফ্যাটি লিভার

৪. গলব্লাডার স্টোন বা পিত্তথলিতে পাথর

৫. মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুচক্র

৬. অ্যাজমা

৭. ক্যানসার

৮. এছাড়া স্থুলকায় শিশুদের মধ্যে আচরণগত  সমস্যাও দেখা যায়। যেমন: মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

শিশুর স্থুলতায় করনীয়:

পারিবারিক সহযোগিতা হল স্থুলকায় শিশুদের সবচে বড় চিকিৎসা। স্থুল শিশুদের ওজন কমানোর ডায়েট দেওয়া যাবে না। কারন ওজন কমানোর ডায়েট দিলে তাদের শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঠিক মত হবে না। এদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে এবং সুনিয়ন্ত্রিত সক্রিয় জীবন-যাপনে উৎসাহিত করতে হবে। স্থুল শিশুদের তাদের প্রয়োজনীয় ক্যালরির সমান পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে এবং অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে। এর পাশাপাশি নিচের উপদেশগুলো মেনে চলতে হবে-

১. অধিক পরিমানে শাক-সব্জি, ফলমূল ও শস্য জাতীয় খাবার দিতে হবে। বেশি বেশি ভিটামিন সি জাতীয় শাক-সব্জি, ফলমূল খেতে হবে।

২. অপেক্ষাকৃত কম চর্বিযুক্ত দুধ বা চর্বিবিহীন দুধ দিতে হবে। প্রোটিনের উৎস হিসাবে কম চর্বিযুক্ত মাছ, মাংস, ডাল, সীমের বীচি এগুলো দিতে হবে।

৩. প্রচু্র পরিমানে পানি খেতে হবে।

৪. চিনি জাতীয় খাবার ও কোমল পানীয় খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে।

৫. সম্পৃক্ত ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট এবং অত্যাধিক ক্যালরি যুক্ত খাবার যেমন: পিজ্জা, বার্গার, হটডগ এসব খাওয়া বাদ দিতে হবে।

৬. বেশি লবনাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

৭. ছেলেমেয়েদের শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকার জন্যে উৎসাহিত করতে হবে। যেমন: হাঁটাচলা, সাঁতার, নাচ, জাম্পিং ইত্যাদি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে ছেলে-মেয়েদের দৈনিক কমপক্ষে ১ ঘন্টা বাইরে খেলাধূলা করতে দিতে হবে।

৮. দিনে ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকা যাবে না। শিশুদের বিনোদনের জন্যে সবসময় পরিবারের সাথে সক্রিয়ভাবে থাকার জন্যে উৎসাহিত করতে হবে।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top