আমাদের চারপাশে হরহামেশাই বিষপানের মত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। হতাশা, মানসিক বৈকল্য, পরীক্ষার খারাপ ফলাফল, পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ, প্রেমে ব্যর্থতা সহ বিভিন্ন কারনে বিষ খাওয়ার মত ঘটনা ঘটে থাকে। সাধারণত কোন কারনে মানসিক আঘাত পেয়ে তীব্র রাগ, হতাশা বা ক্ষোভের কারনে কোন ব্যাক্তি বিষপান করতে পারেন। এছাড়া অনেক সময় অভিভাবকদের অসতর্কতার কারনে ছোট বাচ্চারা ভুল করে বিষ খেয়ে ফেলতে পারে। কেউ বিষ খেয়ে ফেললে সময়মতো জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে ব্যক্তির জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
সাধারণত বিষ হিসাবে যা খাওয়া হয়:
১. কীটনাশক জাতীয় দ্রব্য।
২. ঘুমের ওষুধ বা অন্য যেকোন ওষুধ বেশিমাত্রায় খেয়ে ফেলা।
৩. টয়লেট বা রান্নাঘর পরিস্কার করার জন্য ব্যবহৃত ডিটারজেন্ট, হারপিক, ডেটল বা স্যাভলন।
৪. কেরোসিন বা তারপিন তেল ইত্যাদি।
৫. ইঁদুর মারার বিষ।
উপসর্গ:
১. বমি বা তীব্র বমি ভাব
২. তীব্র পেট ব্যথা
৩. সারা শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়ার অনুভূতি
৪. অবচেতন হওয়া বা জ্ঞান হারানো
৫. খিঁচুনি
৬. ঠোঁট ও মুখের চারপাশে লালচে বা পোড়া দাগ
তাৎক্ষনিকভাবে যা করতে হবে:
১. চটজলদি ব্যাক্তির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ফেলতে হবে। তার জ্ঞান আছে নাকি নেই, শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিকমতো হচ্ছে কিনা ইত্যাদি দেখে নিতে হবে।
২. ব্যাক্তি সচেতন থাকলে দ্রুত জেনে নিতে হবে কি খেয়েছেন, কতটুকু খেয়েছেন এবং কতক্ষণ আগে খেয়েছেন।
৩. আশপাশে কোন বিষের কৌটা বা ওষুধের প্যাকেট পাওয়া যায় কিনা তা এক নজরে দেখে নিতে হবে
৪. কোন গন্ধ পাওয়া যায় কিনা তা খেয়াল করতে হবে। কারন এর মাধ্যমে অনেক সময় ব্যক্তি কি ধরনের বিষ খেয়েছেন সে ধারণা পাওয়া যায়।
৫. মুখের ভেতরে, শরীরে বা কাপড়ে ক্ষতিকর কোন পদার্থ বা দ্রব্য লেগে থাকলে তা পরিস্কার করে ফেলতে হবে। সম্ভব হলে শুকনো কাপড় দিয়ে মুখের ভেতরটা পরিস্কার করে দিতে হবে।
৬. ব্যক্তি বমি করতে থাকলে তাকে একপাশে কাত করে দিতে হবে। তা নাহলে বমি শ্বাসনালীতে চলে গিয়ে শ্বাস আটকে যেতে পারে।
৭. বমি পলিথিন বা কোন কৌটায় সংরক্ষণ করতে হবে। এটা পরবর্তীতে বিষ সনাক্তকরণে সাহায্য করে।
৮. যত দ্রুত সম্ভব উপরের কাজগুলি সেরে নিয়ে ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে।
যা করা যাবে না:
১. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মুখে কিছু খাওয়ানো যাবে না। রোগী অচেতন থাকলে তো প্রশ্নই ওঠে না। এতে অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে।
২. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বমি করানোর চেষ্টা করা যাবে না। তবে নিজে থেকেই বমি করলে ভিন্ন কথা।
যেসব বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে:
১. ওষুধপত্র ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি (যেমন: কীটনাশক, হারপিক, ডেটল, স্যাভলন ইত্যাদি) শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
২. ঘরে খাবারের পাত্র, কৌটা বা বোতলে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি রাখা যাবে না।
৩. যেকোন ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ের সময় মেয়াদ আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।