কুকুরে কামড়ানো একটি দুর্ঘটনা হলেও এর সাথে জীবনঘাতি রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। শহরে উপদ্রব বেশ কম থাকলেও মফস্বল বা উপশহরের বাজারে কিংবা গ্রাম-গঞ্জের লোকালয়ে এরকম বিপত্তি ঘটে থাকে প্রায়শই। কুকুর কামড়ালে যে প্রাণঘাতি রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে তা হলো র্যাবিস বা জলাতঙ্ক। এই রোগে আক্রান্ত হলে পরিণাম ভয়াবহ। এছাড়া কুকুর কামড়ালে সেলুলাইটিস সহ যেকোন মাত্রার স্কিন অ্যান্ড সফট টিস্যু ইনফেকশন হবার প্রবণতা থাকে।
র্যাবিস রোগের ভাইরাস আক্রান্ত কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, শেয়াল বা অন্যান্য প্রাণীর আঁচড় বা কামড় থেকে এই রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। এসব প্রাণীর লালায় র্যাবিস রোগের ভাইরাস উপস্থিত থাকে। কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে তা দ্রুতই স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরে প্রবেশ করে। প্রথমত, সতর্কতার সাথে এই রোগ থেকে দূরে থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, গৃহপালিত প্রাণীদের স্বাস্থ্য ও রোগ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং তৃতীয়ত, আক্রান্ত হওয়া মাত্র আমাদের কী কী করণীয় তা জানতে হবে।
রোগের লক্ষণ:
র্যাবিস বা জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ অন্যান্য সাধারণ রোগের মতোই। যেমনঃ
১. তীব্র জ্বর,
২. বমি বমি ভাব,
৩. অনিদ্রা,
৪. দুশ্চিন্তা ও হ্যালুসিনেশন (অলীক কিছু দেখা বা বিশ্বাস করা),
৫. অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ (হাইপার স্যালাইভেশন),
৬. খেতে কষ্ট হওয়া,
৭. পানি দেখলে ভয় পাওয়া (হাইড্রোফোবিয়া) ইত্যাদি।
এসবই রোগ হবার পরের লক্ষণ। রোগটি সরাসরি আমাদের মস্তিষ্কের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম (কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র)-কে আক্রান্ত করে। তাই আক্রান্ত হলে ব্রেইন ডেথ-এর মাধ্যমে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
কুকুরে কামড়ালে কি করবোঃ
১. ক্ষতস্থান দ্রুত পরিষ্কার করুনঃ কামড়ানোর সাথে সাথে আক্রান্ত স্থান সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি সহকারে ধুয়ে ফেলতে হবে।
২. রক্তপাত বন্ধ করুনঃ যদি রক্ত বের হতে থাকে তা পরিষ্কার কাপড়, ব্যান্ডেজ, পরিষ্কার দুর্বা ঘাস, পরিষ্কার রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে চেপে ধরে বন্ধ করতে হবে।
৩. দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াঃ দেরী না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষতস্থান ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করে তবেই পরবর্তী চিকিৎসার নির্দেশনা প্রদান করবেন। এই পরিস্থিতিতে যেকোন ধরনের ঘরোয়া চিকিৎসা রোগীকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়ার সামিল হবে।
চিকিৎসা:
১. র্যাবিস ভ্যাকসিনঃ র্যাবিস কামড়ানোর পরে আমরা সাধারণতঃ র্যাবিস ভ্যাকসিনই ব্যবহার করি। বাজারে বিভিন্ন নামে এগুলো পাওয়া যায়। তবে ভ্যাকসিন গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ভ্যাকসিনের ডোজ:
ইনজেকশনটি মাংসপেশীতে দিতে হবে। সর্বমোট ডোজ ৫টি।
প্রথম ডোজ: আক্রান্ত হবার দিন।
দ্বিতীয় ডোজ: আক্রান্ত হবার তৃতীয় দিন।
তৃতীয় ডোজ: আক্রান্ত হবার ৭ তম দিন।
চতুর্থ ডোজ: আক্রান্ত হবার ১৪ তম দিন।
পঞ্চম ডোজ: আক্রান্ত হবার ২৮ তম দিন।
কামড়ানোর পরেই র্যাবিস হবার সম্ভাবনা সন্দেহ করলেই এই ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভ্যাকসিন শরীরে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্রিয়া শুরু করতে ৭ থেকে ১০ দিন সময়ের প্রয়োজন। কারন এটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। তাই যত দ্রুত সম্ভব, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
২. আরেকটি ডোজ শিডিউল অবশ্য আছে। একে ইন্ট্রাডার্মাল শিডিউল বলা হয়। মাংসপেশীতে না দিয়ে চামড়ার নিচে একটি বিশেষ স্তরে দেওয়া হয় ইনিজেকশন। ০.১ মিলি পরিমাণ ইনজেকশন প্রতিবার শরীরের দুটি পৃথক জায়গায় দেওয়া হয়। ডোজ ৪টি। এগুলো ০, ৩, ৭ ও ২৮ তম দিনে দিতে হবে।
৩. র্যাবিস রোগের চিকিৎসায় ইমিউনোগ্লোবিনও (আরআইজি) ব্যবহার হয়ে থাকে।
গর্ভবতী মায়েরদের জন্য র্যাবিস ভ্যাকসিন কি নিরাপদ?
গর্ভাবস্থায় কোন ওষুধ না ইঞ্জেকশনকেই ‘নিরাপদ’ বলা যাবে না। কিন্তু র্যাবিস রোগ প্রাণ সংহারী। তাই মা ও অনাগত শিশুর কথা চিন্তা করে এই ওষুধ গর্ভবতী মায়েরদেরও দেয়া হয়ে থাকে। ভ্রূণের উপর এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কী না তা এখনো গবেষণাধীন।