স্ট্রোক আমাদের সবার কাছেই খুব পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। আধুনিক জীবন-যাপন ও অনিয়ন্ত্রিত খ্যাদ্যাভ্যাসের কারনে দিনকেদিন এর প্রবণতা বাড়ছে। সাধারণত মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহের ক্ষেত্রে কোন ধরনের বাধার সৃষ্টি হলে স্ট্রোক হয়। স্ট্রোক হলেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি যেমন কমে, তেমনি স্বভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনা ও পুনরায় স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়ানোও সম্ভব হয়। এ কারনে স্ট্রোকের লক্ষণগুলো বুঝতে পারাটা খুব জরুরি। কিভাবে বুঝবেন স্ট্রোক হয়েছে? নিচে স্ট্রোক চেনার পাঁচটি উপায় দেয়া হল-
১) মুখ বেঁকে যাওয়াঃ ব্রেইন স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মুখ বেঁকে যাওয়া। রোগীর মুখের এক পাশ বেঁকে গেলে বা অসাড়তা অনুভব করলে তাকে হাসতে বলুন। যদি রোগী হাসতে না পারে তবে স্ট্রোক হয়েছে বলে ধরে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে তাকে দ্রুত হাসাপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন।
২) হাত ও পা অবশ বা দুর্বল অনুভূত হওয়াঃ স্ট্রোক হলে এক পাশের হাত অথবা পা কিংবা উভয় পাশের হাত ও পা অবশ বা দুর্বল অনুভূত হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীকে হাত অথবা পা উপরের দিকে তুলতে বলুন। স্ট্রোকের রোগী হলে হাত বা পা উপরে উঠাতে পারবে না।
৩) কথা বলতে অসুবিধা হওয়াঃ স্ট্রোকের রোগীকে প্রশ্ন করলে সে ঠিকমত উত্তর দিতে পারবে না। রোগীকে একই প্রশ্ন বারবার করলে এটা বোঝা যাবে। দেখা যাবে, প্রশ্নের উত্তরে রোগী ঠিকমত কথা বলতে পারছে না।
৪) শরীরের ভারসাম্য ঠিক না থাকাঃ স্ট্রোকের রোগীর শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে না। হাঁটার সময় চলাচলে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। রোগীকে হাঁটতে বললে দেখা যাবে সে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। তবে এ সময় রোগীর পাশে অবশ্যই কাউকে থাকতে হবে। তা না হলে রোগী ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেত পারে।
৫) মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হওয়াঃ স্ট্রোকের রোগীর কোন কারন ছাড়াই মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে। সাধারণত মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হলে এ ধরনের তীব্র মাথাব্যথা অনুভূত হয়।
স্ট্রোক বিশ্বব্যাপী মানব মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারন। অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসই স্ট্রোকের জন্য প্রধানত দায়ী। প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা অত্যাবশ্যক। রক্তের কোলেস্টেরল, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান বর্জন, নিয়মিত শরীর চর্চা এবং পর্যাপ্ত সবুজ শাক-সবজি ও সতেজ ফলমূল খাওয়ার মাধ্যমে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি স্ট্রোক হওয়ার পরে তা বুঝতে পারা এবং সে অনুসারে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার মাধ্যমে মৃত্যুঝুঁকি ও জটিলতা অনেকটাই কমিয়ে আনা যেতে পারে।