পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষই কোন না কোনভাবে অ্যাডিক্টেড বা আসক্ত। অ্যাডিক্টেড বলতে যে শুধু ড্রাগ (প্যাথেডিন ,ইয়াবা ইত্যাদিতে) অ্যাডিক্টেড হতে হবে এমনটি নয়। আমাদের চারপাশের অনেকেই সিগারেট বা নিকোটিনে আসক্ত। কেউ ক্যাফেইন, কেউ অ্যালকোহল, কেউ বা বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্রতি অ্যাডিক্ট। প্রযুক্তির এই যগে কেউ কেউ আবার হাল আমলের টেকনোলজি বিশেষ করে ফেইসবুক, টুইটার বা অনলাইন গেইম এর অ্যাডিক্ট। এখানে অ্যাডিকশন বলতে, যে কাজ বারবার করতে ইচ্ছে করে, যা বারবার করলে ভালো লাগে এবং না করতে পারলে অস্থির লাগে সেটাকেই বুঝানো হয়েছে।
মানুষ সাধারণত দুঃখজনক কিছু ভুলে থাকতে, একাকিত্ব কাটাতে, কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা এড়িয়ে চলতে কিংবা একবার পাওয়া আনন্দকে পুনরায় পেতে অ্যাডিক্টেড হয়ে পড়ে। টেকনোলজি বা ফেইসবুক অ্যাডিকশন ঠিক ক্লাসিক্যাল অ্যাডিকশনের পর্যায়ে না পড়লেও আমরা কিন্তু দিন দিন এর প্রতি নির্ভরশীল বা ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যাচ্ছি। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে আমরা এখন এমনি এমনিই ফেসবুকে ঢুকে বসে থাকি। এক স্ট্যাটাস বারবার দেখি, তারপরও লগ আউট হয়ে বের হতে ইচ্ছে করে না। কেন এমনটা হচ্ছে? চলুন দেখি মেডিকেল সায়েন্স ও নিউরোসায়েন্স এই ব্যাপারে কি বলে।
আমাদের ব্রেইনের যে অংশ ইমোশন ,আনন্দ ও কষ্টের সাথে জড়িত তার নাম limbic system সাথে Hypothalamus. লিম্বিক সিস্টেমের কাজ হলো আমাদের আনন্দ দেয়া, কষ্টের অভিজ্ঞতা মনে রেখে কষ্ট থেকে দুরে রাখা, এবং বারবার আনন্দ পাওয়ার জন্য আকৃষ্ট করা। আর এ ক্ষেত্রে প্রধানত যে নিউরোট্রান্সমিটার জড়িত তার নাম ডোপামিন (Dopamine)। ডোপামিনকে বলা হয় আনন্দানুভূতির ফুয়েল। মস্তিষ্কে ভালো অনুভূতি তৈরী হলে ডোপামিন তা বারবার করতে অনুপ্রাণিত করে। ফলে দেখা যায়, আমরা আনন্দ পাওয়ার জন্যেই একটা জিনিস বারবার করি। আর বারবার ডোপামিন নিঃসরণ হওয়ার জন্য মস্তিষ্কের মেসোলিম্বিক সিস্টেমে একটা পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনটা পরবর্তীতে ঐ আনন্দ পাবার আকাংখা আরো বাড়িয়ে দেয়। আর এ ক্ষেত্রে মরফিন ও ফেইসবুক প্রায় একই ধরনের রিঅ্যাকশন করে।
এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া মুড বুস্টার হিসাবেও কাজ করে। অর্থাৎ মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে এর বেশ ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ যখন চরম স্ট্রেস বা মানসিক চাপ অনুভব করে কিংবা ডিপ্রেসড বা চিন্তিত থাকে তখনই সাধারণত বেশি ফেসবুকে ঢুকে। কেননা ফেসবুক মানুষকে কিছু সময়ের জন্য হলেও রিয়েল ওয়ার্ল্ড বা বাস্তব দুনিয়াকে ভুলিয়ে দেয়। আর মানুষ স্ট্রেসড বা ডিপ্রেসড হলেই সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি ঢুকে যা এ্যাডিকশনের একটা কারন।