গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রতিরোধের ৫টি উপায়

গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রতিরোধের ৫টি উপায়

ডায়াবেটিস মানে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের আধিক্য। গর্ভাবস্থায় যে ডায়াবেটিস হয় তাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস। বাংলায় বলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। এটি একটি জটিল সমস্যা। যাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয় তাদের সন্তানধারণের পুরো সময়টা যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হয়। এ রোগে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর জীবনও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। তবে আগে থেকে সচেতন থাকলে এবং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে সহজেই এ সম্পর্কিত জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রতিরোধের উপায়গুলো হচ্ছে-

১. সঠিক খাবার সঠিক মাত্রায় প্রদান করাঃ

  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস-এ আক্রান্ত মায়েদের এমন খাবার দিতে হবে যা তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রিত রাখে। তবে খাবারের পুষ্টিগুণের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
  • মাকে নিয়ম মাফিক খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। এ সময় অল্প অল্প করে বারবার খেতে দিতে হবে।
  • এমন খাদ্য বাছাই করতে হবে যাতে চর্বির পরিমাণ কম ও বেশি আঁশযুক্ত। শর্করার উত্তম উৎস যেমন:ভাত, দানাদার শস্য, ফলমূল ইত্যাদি গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।
  • গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (যেমন: দুধ, বাদাম), লালশাক, পালংশাক, কচুরশাক, কচুর লতি, মলা-ঢেলা মাছসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে।

 

২. শরীর চর্চা ও স্বাভাবিক সচল কর্মতৎপরতা:

প্রাত্যহিক কিছু স্বাভাবিক কাজ শরীরকে সচল রাখতে সাহায্য করে। যেমন: হাঁটা কিংবা সাঁতার কাটা। এর মাধ্যমে শরীর গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

৩. নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করাঃ

গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। পূর্বে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার নজির থাকলে গর্ভকালীন সময়ে দিনে দুইবার গ্লুকোজের মাত্র পরিমাপ করা ভালো। একবার সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এবং দ্বিতীয়বার খাবার গ্রহণের ২ ঘন্টা পর।

 

৪. ইনসুলিন:

যদি খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক কর্মতৎপরতার মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন গ্রহণ করা লাগতে পারে। এছাড়া যেসব রোগীর আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ইনসুলিননির্ভর তাকে অবশ্যই ইনসুলিন দিয়েই চিকৎসা করতে হবে।

 

৫. প্রসব পরবর্তী ব্যবস্থাপনা:

জন্মের পরপরই এবং প্রতি ১ ঘন্টা পর পর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ। কারন বুকের দুধ বাচ্চার রক্তে গ্লুকোজের সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে এবং রক্তে গ্লুকোজ কম থাকার দরুন যেসব সমস্যা হয় তা থেকে বাঁচায়। এছাড়া জন্মের পরবর্তী সময়ে স্তন্যদান করলে মায়ের শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়াতে করণীয়:

একবার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বহু গুন বেরে যায়। যেসব মায়েদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকে তাদের মধ্যে ৫০% পরবর্তী ১০-২০ বছরে ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তী গর্ভধারণে আবারও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে। চলুন ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়াতে করণীয়গুলো জেনে নেই-

 

১. স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করা

২. সঠিক খাবার সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে খাওয়া

৩. ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা

৪. স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা বজায় রাখা

৫. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতি ২ বছর পর পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা।

 

একটু সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে চললে গর্ভকালীন জটিলতা থেকে সহজেই বেঁচে থাকা সম্ভব। পাশপাশি অনাগত সন্তানের জীবনও হয়ে উঠবে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top