আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের শক্তির জন্য প্রয়োজন গ্লুকোজ। খাবার খাওয়ার পর জটিল বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া গ্লুকোজ রক্তের মাধ্যমে শরীরের কোষ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এ গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করার পর শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করবে। তবে গ্লুকোজ কোষের ভিতরে প্রবেশের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় চাবি হলো ইনসুলিন নামক প্রোটিন হরমোন। এটা অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হবার পর রক্তবাহিত হয়ে কোষের আবরণী পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সেখানে পৌঁছে তা জৈব রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলস্বরূপ কোষের রুদ্ধ দুয়ার খুলে দেয়। আর তারপরই গ্লুকোজ পৌঁছে যায় কোষের ভেতরে, শক্তি জুগিয়ে উজ্জীবিত করে তোলে দেহকে।
কিন্তু কোন কারণে যদি অগ্ন্যাশয়ে গোলযোগ দেখা দেয় তবে ইনসুলিন আর ঠিকমতো নি:সৃত হতে পারে না। কিংবা কোষীয় আবরণের কাছাকাছি পৌঁছে ঠিকমত কাজ করতে পারেনা। ফলে কোষে গ্লুকোজের জোগান ব্যাহত হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে থাকে, শক্তির অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে কোষ। মোদ্দাকথা অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেলে তখনই শরীরের ভেতর নানা জৈব-রাসায়নিকের বিপাকীয় কর্মকান্ডের হেরফের হয়।
অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিক মেলাইটাস (ইনসুলিন ডিপেনড্যান্ট ডায়াবেটিস মেলাইটাস) বা টাইপ ১ ডায়াবেটিস হয়। অন্যান্য দেশে টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা মোট ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যার ১০ থেকে ১২ শতাংশ। আমাদের দেশে এর হার ৩ – ৮ শতাংশের মত। অন্যদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা কম ইনসুলিন নিঃসরণ হলে বা প্রতিবন্ধকতার কারণে ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলাইটাস (ইনসুলিন ইনডিপেনড্যান্ট ডায়াবেটিস মেলাইটাস) হয়। আমাদের দেশে এটিই প্রধান ডায়াবেটিস।