কুরবানীর মাংস কাদের এড়িয়ে চলা উচিত?

কুরবানীর ঈদ মানেই রেড মিট বা লাল মাংস। গরু, খাসি, উট, দুম্বা, মহিষ বা ভেড়ার মাংসকে রেড মিট বা লাল মাংস বলে। রেড মিট প্রোটিন বা আমিষের ভালো উৎস। এছাড়া রেড মিটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বা লৌহ, জিঙ্ক, ফসফরাস, থায়ামিন, নায়াসিন, রিবোফ্ল্যাভিন ও ভিটামিন বি-১২ থাকে। এগুলো শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তবে যত উপকারীই হোক না কেন, অতিরিক্ত মাত্রায় রেড মিট গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। বিশেষ করে হৃদপিণ্ডের জন্য এটা খুবই ক্ষতিকর।

রেড মিট শুধু হৃদরোগ নয়, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়। গবেষকদের দাবী, রেড মিটের কারনে কোলন ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার ও পায়ুপথের ক্যান্সার হতে পারে। রেড মিটে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং এলডিএল কোলেস্টেরল থাকে। এই এলডিএল কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া রেড মিটে অতিরিক্ত পরিমাণে সোডিয়াম থাকে যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। রেড মিটের কারনে টাইপ টু ডায়াবেটিসও হতে পারে বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ১৮ আউন্সের বেশি রেড মিট খেলে তা শরীরের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। অর্থাৎ দিনে ২.৫ আউন্সের বশি রেড মিট খাওয়া যাবে না। কিন্তু কুরবানীর সময় এ নিয়ম মেনে চলা খুব কঠিন। এই ঈদে বাধ্য হয়েই অনেক সময় ভুরিভোজ করতে হয়। তাই মাংস খাওয়ার সময় অবশ্যই খারাপ কোলেস্টেরলের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি কিংবা বিপদসীমার কাছাকাছি তারা অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে মাংস খেতে হবে।

কারা রেড মিট খাওয়া এড়িয়ে চলবেন:

১. যাদের ওজন বেশি বা যারা স্থূলতায় আক্রান্ত তাদের অবশ্যই লাল মাংস পরিহার করে চলতে হবে।

২. হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্য রেড মিট খুবই ক্ষতিকর এবং অবশ্য বর্জনীয়।

৩. কিডনির রোগী, গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগে আক্রান্ত, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলসম্পন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে যত কম পরিমাণে রেড মিট খাওয়া যায়, তত ভালো।

৪. গাউট কিংবা বাতের ব্যথার সমস্যা থাকলে রেড মিট বা লাল মাংস না খাওয়াই ভালো। এছাড়া লিভার, গলব্লাডার ও অগ্ন্যাশয়ের অসুখেও রেড মিট খাওয়া বাদ দেওয়া উচিত।

৫. যারা এখনো কোন জটিল রোগে আক্রান্ত নন, কিন্তু পরিবারের কোন না কোন সদস্যদের হৃদরোগ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার নজির আছে তাদেরও লাল মাংস কম খেতে হবে।

৬. যাদের বয়স ৩০ বছর বয়সের বেশি এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ২০০ মি.গ্রা./ডি.এল.-এর অধিক, তাদের ক্ষেত্রে যেকোন অবস্থাতেই রেড মিট বা লাল মাংস খাওয়া পরিহার করা উচিত।

অনেকের কাছে মাংসের চাইতে কলিজা ও মগজ খাওয়া বেশি পছন্দ। কিন্তু কলিজা ও মগজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ মাংসের চাইতে বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ৯০ মি.গ্রা. কোলেস্টেরল থাকে। অন্যদিকে প্রতি ১০০ গ্রামে কলিজার ক্ষেত্রে ৩৫৫ মি.গ্রা. এবং মগজের ক্ষেত্রে ৩১০০ মি.গ্রা. কোলেস্টেরল থাকে। তাই কলিজা ও মগজ খাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।

রেড মিট যেহেতু খারাপ কোলেস্টেরলের উৎস তাই কুরবানির পর মাংস কাটার সময় যতটা সম্ভব চর্বি কেটে বাদ দিতে হবে। রান্নার আগে মাংস আগুনে ঝলসে নিলে কিছু চর্বি গলে পড়ে যায়। এভাবে মাংস চর্বিমুক্ত করা যেতে পারে। পাশাপাশি রেড মিটের সাথে বিভিন্ন ধরনের শস্য দানা‚ শাক-সবজি, আঁশযুক্ত খাবার ও সালাদ বেশি করে খেতে হবে। এতে ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমে যাবে।

InfotakeBD

View posts by InfotakeBD
InfotakeBD is a information sharing blog, We share information for you. Please visit us and if you want to contribute for this blog please email us infotakebd@gmail.com. Thank you

Leave a Reply

Scroll to top