পিরিয়ড, মাসিক বা মেয়েদের মাসিক ঋতুচক্র (Menstruation) প্রত্যেক নারীর জীবনেরই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সমাজে এক ধরনের সংস্কার কাজ করে। ফলে অনেক নারীই বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অথচ এ সময়ে নারী দেহের জন্য অতিরিক্ত পুষ্টি দরকার। প্রয়োজন বাড়তি কিছু খাবার গ্রহণ। পিরিয়ডের দিনগুলোতে রক্তক্ষরণের কারনে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। এই ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া সহ এ সময়ে নারীকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে কিছু খাবার গ্রহণ বেশ জরুরি। চলুন সেই খাবারগুলো সম্পর্কে জেনে নেই-
১. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: যেসব খাবারে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায় মাসিকের সময় তা নিয়মিত খাবার চেষ্টা করতে হবে। যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, কচু শাক, পুঁই শাক, ডাঁটা শাক, ফুলকপির পাতা, ছোলা শাক, ধনে পাতা, তরমুজ, কালো জাম, খেজুর, পাকা তেঁতুল ও আমড়া। এই খাবারগুলো শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করবে।
২. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল: শরীরে আয়রনের ঠিকমত শোষণ ও যথাযথ কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন সি অতীব জরুরি। এ কারনে মাসিকের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খাওয়া প্রয়োজন। বেশ কিছু পরিচিত ফলে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যেমন: পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদি। আমাদের দেশ এসব ফল খুবই সহজলভ্য। মাসিকের সময় এ ফলগুলো খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৩. বিশেষ ধরনের শরবত ও ফলের জুস: মাসিকের দিনগুলোতে বিশেষ রেসিপির ফলের জুস ও শরবত শরীরকে চাঙা রাখে। এখানে একটি রেসিপি সম্পর্কে আলোচনা করছি। এই রেসিপির জুস দিনে ২ বার খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়। বিশেষ করে মাসিকের দিনগুলিতে এই জুস শরীরকে ফ্রেস রাখতে বেশ সহায়ক।
রেসিপি: প্রথমে ১টি বড় কাপ নিতে হবে। এবার ১ টি সবুজ রঙের আপেল নিয়ে জুস করে ঐ কাপে রাখতে হবে। এরপর এর সাথে ৩টা গাজর জুস করে মিশাতে হবে। তারপর ২টা বীট জুস করে কাপে রাখতে হবে। সবশেষে অর্ধেকটা কাগজি লেবুর রস ঐ কাপে মিশিয়ে পুরো মিক্সারটি ভালভাবে নাড়তে হবে। মাসিকের সময় এই জুসটি দিনে ২ বার করে পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।
৪. পানি: মাসিকের সময় রক্তপাতের পাশাপাশি শরীর থেকে অনেক খানি তরল বেরিয়ে যায়। এই অভাব পূরণ করার জন্য এ সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, চা, কফি, কোলা ইত্যাদি দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ হবে না। সাধারণ পানিই শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে সব চাইতে বেশি কার্যকর। চাইলে, হালকা কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে। এতে অনেক সময় পেট ব্যথা থাকলে আরাম পাওয়া যায়।
৫. বাদাম: বাদামে নানান রকম ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এগুলো মাসিকের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তবে লবণে ভাজা বা চিনি মেশানো বাদাম খাওয়া উচিত নয়। চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তা, আখরোট ইত্যাদি পিরিয়ডজনিত শরীরের ঘাটতি পূরণে বেশ উপকারী।