মাথা থাকলে মাথাব্যথা হতেই পারে। সমস্যা হলো এই মাথাব্যথা যেমন সামান্য কারণে হতে পারে আবার এই মাথাব্যথাই হতে পারে প্রাণঘাতী কোন রোগের উপসর্গ। সাধারণত মানসিক, সাইনাসের ইনফেকশন, চোখের বা কানের বিবিধ সমস্যা, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ৫০-৭০ শতাংশ মাথাব্যথা মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে হয়। এছাড়া ১০-১৫ শতাংশ মাইগ্রেনের কারণে, ৪ শতাংশ অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের কারণে এবং ৭-১০ শতাংশ অন্যান্য কারণে হয়ে থাকে।
চলুন, মাথাব্যথা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী জেনে নেই।
১। মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে মাথাব্যথা:
এ ধরনের মাথাব্যথা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত পুরো মাথা জুড়ে ভোঁতা একধরনের ব্যথা হয় যা সাধারণত দিনের শেষভাগে এসে বেশী হয়। কোলাহলে এই ধরনের মাথাব্যথার তীব্রতা বেশী হয়। এটি কয়েকমাস থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে পারলে এর থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
২। মাইগ্রেন জনিত মাথাব্যথা:
সাধারণত অল্প বয়সী মহিলাদের এ ধরনের মাথাব্যথা বেশী হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মাথার যেকোন এক পাশে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা শুরু হবার পূর্বে চোখে ঝাপসা দেখা, তীব্র আলোর ঝলকানি দেখা, মাথা হাল্কা লাগা, বমি বমি ভাব হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। অ্যালকোহল, চকলেট, পনির ইত্যাদি খেলে, মাসিকের সময়, জন্ম বিরতিকরণ পিল সেবন করলে, অতিরিক্ত কাজের চাপ, ঘুম কম হলে মাইগ্রেন জনিত মাথাব্যথা বেশি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে এবং এসব খাবার ও আচরণ পরিহার করতে হবে।
৩। সাইনুসাইটিসের কারণে মাথাব্যথা:
মাথার যে কোন একটি নির্দিষ্ট জায়গা জুড়ে ব্যথাটা হয়ে থাকে। সকালের দিকে ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। ব্যথার সাথে জ্বর ও সর্দি কাশি থাকতে পারে এবং চোখ মুখ ফুলে যেতে পারে। নামাজের রুকু সেজদার সময় কিংবা সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করলে ব্যথা তীব্র হয়ে থাকে। এমন হলে অবশ্যই নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
৪। চোখের দৃষ্টি জনিত কারণে মাথাব্যথা:
খুব মনোযোগ দিয়ে লেখা বা পড়ার সময় এই ধরনের মাথাব্যথা হয়ে থাকে। মাথাব্যথার সাথে সাথে রোগীরা চোখে পরিষ্কার দেখতে না পাওয়ার অভিযোগ করে থাকে। অনেকেই এ ধরণের সমস্যায় প্যারাসিট্যামল খেয়ে থাকেন। তবে প্যারাসিট্যামল খেলে সমস্যা খুব একটা কমে না। চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করিয়ে সঠিক চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে এর থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। গ্লুকোমা হলেও মাথাব্যথা হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে বয়স ৪০ বছরের বেশি হতে হবে। এছাড়া গ্লুকোমা হলে রোগী চোখ দিয়ে ঠিকমত দেখতে পায় না।
৫। খুলির ভেতরে উচ্চচাপ জনিত কারণে মাথাব্যথা:
মাথাব্যথার সবচেয়ে মারাত্মক এবং ঝুঁকিপূর্ন কারন এটি। ব্রেইন টিউমার, ব্রেইনের পর্দার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ফ্লুইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া অথবা প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া, স্ট্রোকের কারণে ব্রেইনের ভেতর রক্ত জমা, মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস ইত্যাদি কারণে এই উচ্চচাপ হয়ে থাকে এবং মাথা ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে প্রায়ই মাথাব্যথার সাথে বমি এবং চোখে ঝাপসা দেখার লক্ষণ দেখা যায়। মাথাব্যথার ধরনটি এক্ষেত্রে নিম্নরূপ:
i. সাধারণত ধীরে ধীরে মাথাব্যথা বাড়তে থাকে। তবে যদি হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা হয় এবং রোগী সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে তাহলে মস্তিষ্কের রক্ত ক্ষরণ হবার কথা চিন্তা করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
ii. সাধারনত পুরো মাথা জুড়ে ব্যথা হয়ে থাকে।
iii. সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করলে মাথাব্যথা বেড়ে যায়।
iv. সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মাথাব্যথা বেশি থাকে।
v. ধীরে ধীরে রোগীর খিঁচুনি, হাত ও পায়ের শক্তি কমে যাওয়া, চোখের দৃষ্টি অত্যন্ত কমে যাওয়া, ঘন ঘন বমি হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত একজন নিউরোসার্জন এর পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।
মনে রাখতে হবে, মাথাব্যথা কোন রোগ নয়। বরং এটি রোগের উপসর্গ মাত্র। তবে এই মাথাব্যথা অনেক রোগের পূর্বসতর্কতা হিসেবে কাজ করে, যার মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব।